রোগী সেজে ডাক্তারের চেম্বারে যাতায়াত করতেন কথিত সুন্দরী। ফোনালাপও হত। এরপর তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও বাড়তে থাকে। ফলে ডাক্তারের সঙ্গে চলে নিয়মিত কথোপকথন। পরে কথিত সুন্দরী এক আদিবাসী মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখায় ডাক্তারকে।
এরপর ডাক্তার ওই সুন্দরী নারীর ফাঁদে পা বাড়ায়। ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে টাঙ্গাইল এলাকায় যাওয়ার আগেই ডাক্তার মোনায়েমুল বাশারকে (৪০) মিরপুর থেকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণকারীরা ডাক্তারকে টাঙ্গাইলের মধুপুর ভাওয়াল বনের নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। ডাক্তারের চোখ মুখ বেঁধে বনের ভেতর আটকিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অপহৃতের পরিবারের ফোনে চিৎকার ও কান্নার শব্দ শুনিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
অপহরণের এই অভিনব কায়দার অভিযোগ পাবার পর র্যাব-৪ একটি দল তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে নগদ ২৭ হাজার পাঁচশ টাকাসহ অপহরণ চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করে।
আটকরা হলেন- ফয়েজ উদ্দিন (৩২), আলমগীর হোসেন (১৮), বিল্লাল হোসেন (৩৮), আব্দুল হালিম (৫২), ফয়সাল আহমেদ (১৮) ও আব্দুস সালাম (৫৫)। কথিত সেই সুন্দরী নারীকে আটক করতে পারেনি র্যাব।
র্যাব বলছে, ‘এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত বিকাশের এজেন্ট, নারী সদস্যসহ আরও ৩/৪ জন সদস্যকে আটকের চেষ্টা চলছে।’ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।
অপহরণের বিষয়ে চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, ‘ডাক্তারের স্ত্রী ও শ্যালকের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে অপহরণ চক্র বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকা নেয়। এরপর সন্ধ্যা থেকে আটকে রেখে মুক্তিপণের দাবিতে সারারাত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ ভোর সাড়ে ৬টার দিকে অভিযান চালিয়ে ডা. মোনায়েমুল বাশারকে উদ্ধার করে আটক করা হয় অপহরণ চক্রের ছয় সদস্যকে।’
অপহরণ চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্যের বরাতে এ র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘চক্রটি এ পর্যন্ত কাউকে হত্যা করেনি। অপহরণ চক্রটি গত দশ বছর ধরে বিভিন্ন পন্থায় মাঝারি ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নারীদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদ পেতে অপহরণ করে। অপহরণের পর সুন্দরীদের প্রলোভন দেখিয়ে নির্জন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ দাবি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।’
তিনি বলেন, ‘অপহরণ চক্রটি পাঁচ লাখ, দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করলেও ৩০ কিংবা পঞ্চাশ হাজার পেলেই অপহৃতকে ছেড়ে দেন। তারা সব সময় মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে অপহরণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চক্রটির আদিবাসী সুন্দরী নারীরা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কৌশলে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ডলার বিক্রির কথা বলেও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে।’
এ ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টেশন থেকে যাত্রীদের জোর করে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটে ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবেশে চলন্ত গাড়িতে হাত পা বেঁধে অজ্ঞান করে মধুপুর ভাওয়াল বনে নিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা মুক্তিপণ আদায় করত।
মঞ্জুরুল কবির বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করবো, অহেতুক কারও সঙ্গে ফোনো সখ্যতা গড়ে না তুলতে। সুন্দরী নারীর সঙ্গে প্রেম কিংবা ডলার ভাঙানোর ফাঁদে পা না দিতে।