‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার সব আসামি এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আবরারের খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীদের ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’ শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে মতিঝিল এলাকা।

সোমবার দুপুর ১ টায় শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে নটরডেম কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। মিছিলটি শাপলা চত্বরে আসলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে শাপলা চত্বরে রাস্তার ওপর বসে ও দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা।

এসময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর আবরার’, ‘ফাঁসি, ফাঁসি, ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই,’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘ অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আর নয় অনাচার, এবার চাই সুবিচার’- শিক্ষার্থীদের এ ধরনের স্লোগানে কম্পিত হয়ে উঠে মতিঝিল এলাকা।

নটরডেম ছাত্রদের দাবির বিষয়ে সঞ্জিত কুমার গুহ বলেন, ‘ছাত্রদের দাবির সঙ্গে আমরা একমত। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি পাশাপাশি ছাত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছি তারা যেন ক্লাসে ফিরে যায়।’

নটর ডেম কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ব্রায়ন রোজারিও বলেন, ‘আবরার ফাহাদ নটর ডেম কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। এই অনুভূতির জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা হয়ত রাস্তায় নেমেছে। বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা মর্মাহত, আমরাও এর বিচার দাবি করছি।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুতই এ বিচার করতে হবে।

এ ঘটনার পর হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। লাগাতার আন্দোলন ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আবরার ফাহাদ হত্যায় অভিযুক্ত বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১৯ নেতাকর্মীকে ক্যাম্পাস থেকে অস্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ।

এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা। হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলিট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ইতিমধ্যে পুলিশ ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। ১৫ জন এজাহারনামীয় এবং চার জন এজাহার বহির্ভূত। ১৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। রোববার পর্যন্ত চারজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর, মোহাজিদুর রহমানকে, শামসুল আরেফিন, মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন, মিজানুর রহমান (আবরারের রুমমেট), ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং হোসেন মোহাম্মদ তোহা।

এদের মধ্যে ১৩ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। আর ১৯ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর