‘আগুনের খবর পাওয়ার পর দৌড়াইয়া আইসা দেখি আমার দোকানের সব পুড়ে ছাই। আমার সব শেষ, আমি এখন কী করব?’ চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই সব মালামাল হারানোর কথা বলছিলেন খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন।
রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে বুধবার মধ্যরাতে ভয়াবহ আগুনে যে অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে গেছে, ইলিয়াসের দোকানটিও তার একটি।
রাত সোয়া ৩টার দিকে খিলগাঁও বাজারে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভস্মিভূত দোকানগুলোর দোকানিরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশা। কী করবেন, পরিবার নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর পুঁজি কোথায় পাবেন সেই চিন্তা ভর করেছে তাদের মনে। দোকানিদের অনেকেই মলিন চেহারায় তাকিয়ে আছেন পুড়ে যাওয়া দোকানগুলোর দিকে। তাদের মধ্যে বাজারের সামনে বসে বিলাপ করতে দেখা যায় অনেককে।
ক্ষতিগ্রস্ত ইলিয়াস জানান, তার দোকানটি ছিল কাপড়ের। সেটি থেকে যা আয় আসত তা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলত। তিনি বলেন, ‘রাতে বাসায় গিয়ে খাবার খেয়ে মাত্র ঘুমাইছি। তখনই ফোন বেজে ওঠে। কলিজাটা চিলিক দিয়ে ওঠে। ফোন ধরার পর খবর পাই বাজারে আগুন লাগছে। সঙ্গে সঙ্গে লাফাইয়া উঠি। দৌড়াইয়া আইসা দেখি আমার দোকানের সব মাল পুড়ে ছাই। আমি এখন কী করব? আমার তো সব শেষ।’
আরেক ব্যবসায়ী মো. মোশতাক আহমেদের দুটি দোকান রয়েছে খিলগাঁও বাজারে। তিনি জানান, এর মধ্যে একটি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ভেতরের কোনো মালামালই অবশিষ্ট নেই। অন্য দোকানটি থেকে কিছু মালামাল বের করে রাখতে পেরেছেন। বাকি মালামাল পুড়ে ছাই।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, রাত সোয়া ৩টার দিকে খিলগাঁও বাজারে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ভোর সোয়া ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই বাজারে ছোট ছোট প্রায় ১৩০০ দোকান ছিল। তার মধ্যে আনুমানিক অর্ধশতাধিক দোকান পুড়ে গেছে।
তবে আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষতির সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে এখনও কিছু জানা যায়নি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বনানী, গুলশান, ডেমরা, গাউছিয়া মার্কেট ও তোপখানা রোডে ট্রপিক্যাল টাওয়ারের পর এবার আগুন লাগল খিলগাঁও বাজারে। গত ২৮ মার্চ বনানীর ২২তলা এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ৭১ জন আহত হন।
এর একদিন পরই ৩০ মার্চ গুলশান-১ ও ২ নম্বর এলাকায় আগুন লাগে। ১ এপ্রিল রাজধানীর ডেমরা ও গাউছিয়া মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর পর দিন তোপখানা রোডে ট্রপিক্যাল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।