ভিসির পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের রক্ত!

বেঁধে দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পরও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য পদত্যাগ না করায় নিজেদের রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ববি উপাচার্য ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগ দাবিতে স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখনের এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। টানা আন্দোলনের নবম দিনের মাথায় বুধবার বেলা আড়াইটায় নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে দেয়াল লিখনের এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ কর্মসূচি শুরু হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় রক্ত দেন। এরপর সেই রক্ত দিয়ে পদত্যাগ দাবি জানিয়ে দেয়াল ও ব্যানার লেখা হয়।

একাডেমিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা এক এক করে রক্ত দিতে থাকেন। সেই রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান লেখা হয় এবং ক্যাম্পাসজুড়ে পোস্টারিং করা হয়।

এর আগে প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের প্রশাসনিক শাখার সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ববি ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সেখানে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
গত ১ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেন তারা। এর পরপরই ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা।

বুধবার বেলা ২টায় আলটিমেটামের সময় শেষ হয়। আলটিমেটামের সময় শেষ হলেও ভিসি পদত্যাগ না করায় এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না দেয়া এবং তাদের খাবার প্যাকেট না দেয়ায় অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপর একটি অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করার চেষ্টাকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন উপাচার্য। উপাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ২৭ মার্চ সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

ওইদিন আরও কিছু দাবি যুক্ত করে ১০ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে ২৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে উপাচার্য তার একক ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ বিকেল ৫টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশের ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৮ মার্চ আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে হলেই অবস্থান নেন। একই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক। মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্য ইমামুল হক বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিরসনে বরিশালের রাজনৈতিক ব্যক্তি, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষানুরাগী, সুশীল সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমসহ সচেতন বরিশালবাসীর সহযোগিতা চান।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন বলেন, এখন আর পাঁচ দফা বা ১০ দফা নয়, এখন একটাই দাবি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ। ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হলেও পদত্যাগ করেননি ভিসি। তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব আমরা।

তবে ভিসি ড. এসএম ইমামুল হক বলেছেন, কোনো অবস্থাতে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। শিগগিরই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর