বার্তা বাজারে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত কমিটি গঠন

শনিবার (৫ অক্টোবর) দেশের প্রথম সারির অনলাইন নিউজ প্রোট্রাল বার্তা বাজারে ‘সিরাজগঞ্জে গরিবের চাল বিত্তবানদের ঘরে! বঞ্চিত হচ্ছেনা মৃত ব্যক্তিরা’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দুই সদস্য বিশিষ্ট ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে এ তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান খাঁন জানান, বিষয়টি নিয়ে আমার ঊর্ধ্বতনের মৌখিক নির্দেশে আমি দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ দিকে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন এ অভিযোগ পেয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন আলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে তিনি মুঠোফোনে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য সারা দেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ১০ টাকা কেজির চাল বিতরণ কর্মসূচি সরকার চালু করলেও এ উপজেলায় চালের বড় একটি অংশই চলে যাচ্ছে বিত্তবানদের ঘরে।

স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা-কর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, বাড়িওয়ালা, চাকরিজীবীসহ আর্থিকভাবে সচ্ছলদেরই তালিকায় নাম লিপিবদ্ধ করে চাল উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে কালো বাজারে। ফেয়ার প্রাইজের চাল নিয়ে এমনি ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে।

উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নে ২৪২০ টি, গাড়াদহ ১৯৫৮, পোতাজিয়া ২১৬৮, রূপবাটি ১৯০০, গালা ১৯৫০, পোরজনা ২৭৭৯, হাবিবুল্লাহনগর ২০০০, বেলতৈল ২২০০, খুকনি ২৫০০, কৈজুরি ২৭১৯, সোনাতুনি ২৫০০, নরিনা ২২৪৪, জালালপুর ১৫৭১ টি মিলে ১৩টি ইউনিয়নে মোট কার্ডধারির সংখ্যা ২৩ হাজার ৬৯০ জন হলেও তালিকার প্রায় ৭০ শতাংশই ভূয়া বলে অভিযোগ উঠেছে।

তালিকায় থাকা অধিকাংশ মানুষই জানেনা ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের কথা। এমনকি তারা জানেনা কিভাবে তাদের নাম তালিকায় ঢুকেছে। একই সাথে তালিকা থেকে বাদ পড়েনি মৃতরাও। এমন ভয়াবহ অভিযোগের তীর ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই।

সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান, খাদ্য কর্মকর্তা, ট্যাগ অফিসার ও ডিলারদের যোগসাজশে কৌশলে জনগণের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে ভূয়া তালিকা তৈরি করে এসব চাল আত্মসাৎ করেছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের ২১৬৮ জন কার্ডধারির তালিকা থাকলেও তা কেবল কাগজে কলমেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে উত্তোলন করা চাউল বিতরণ করা শেষ হয়েছে বলে কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে। মাষ্টাররোল তৈরি হয়েছে চাউল গ্রহিতাদের আঙ্গুলের টিপসই নিয়ে।

বিষয়টি যাচাই করতে প্রতিবেদক প্রথমেই খোজ নেন পোতাজিয়া ইউনিয়নের কাকিলামারি গ্রামে। কথা হয় তালিকায় থাকা ১১২৯ নং কার্ডধারী জুলু মোল্লার ছেলে হানিফের সাথে। ১০ টাকা কেজি দরের চাউলের কার্ড আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন।

উচ্চ স্বরে বললেন,আমি জীবনেও ইউনিয়ন থেকে কোন কিছু পাই নাই। শুনেছি ১০টাকা কেজি দরে সরকার চাউল দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কখন কিভাবে কাদের এই চাউল দেওয়া হয় সেটা তার জানা নেই।

এ চিত্র ওই একই গ্রামের জয়নুল আবেদিনের ছেলে আব্বাস মোল্লা, মাহমুদ আলীর ছেলে আশরাফ মোল্লা, আরশাদ আলীর স্ত্রী জাহানারা খাতুন, হাফিজ মোল্লার ছেলে নিজাম উদ্দিন, ছামাদের ছেলে ইয়াছিন, রহিম মোল্লার ছেলে মুকুল মোল্লার। তাদের সাথে কথা বলে বললে জানা যায় আরও ভয়াবহ জালিয়াতির চিত্র।

তালিকায় প্রত্যেকের নাম এবং চাউল উত্তোলনের টিপসই আছে মাস্টাররোলে। অথচ কেউই জানেনা কিভাবে তাদের নাম তালিকায় ঢুকলো। জীবনে এক কেজি চাউলও পায়নি পরিষদের তরফ থেকে। অথচ তাদের নামে বছরের পর বছর চাউল উত্তোলন দেখানো হচ্ছে।

পুরো গ্রাম খুঁজেও চাউল পেয়েছে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু একটি ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে। চালবাজির জালিয়তি থেকে বাদ পড়ছে না মৃত ব্যাক্তিরাও। কবর থেকে তুলে এনে তাদের থেকেও নেওয়া হচ্ছে টিপসই। এমনই ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায় আব্দুর রশিদের স্ত্রী ময়না খাতুনের কাছে গিয়ে। তালিকায় স্বামী স্ত্রী দুজনেরই নাম আছে। ময়না খাতুনের কার্ড নাম্বার ১১৩৭ এবং স্বামী রশীদের কার্ড নাম্বার ১১৩৮। অথচ আব্দুর রশীদ মারা গেছেন ৫ বছর আগে। এ বিষয়ে ময়না খাতুন জানান, তিনি জানেন না কিভাবে তাদের নাম এই তালিকায় উঠেছে। কখনও পরিষদ থেকে কোন প্রকার চাউলই তিনি পাননি।

এভাবে পোতাজিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। দূর্নীতি এবং জালিয়াতির ব্যাপারে পোতাজিয়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য জানান, পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, ট্যাগ অফিসার এবং উপজেলা খাদ্যকর্মকর্তা জোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে এমন জালিয়াতি করে সব চাউল আত্মসাত করছে।

চাল দেওয়ার কথা বলে জনগনের নিকট থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে চেয়ারম্যানরা এ জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে দ্রুত তদন্ত কাজ শেষ করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে মুখোশধারীদের মুখোশ উন্মোচন করবে এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর