খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট শুরু

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল শ্রমিকরা দ্বিতীয় ধাপে চারদিনের আন্দোলন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব নয়টি পাটকলে টানা ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘট শুরু করেছেন।

ধর্মঘটের এ তিনদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা করে রাজপথ অবরোধেরও কর্মসূচি রয়েছে শ্রমিকদের।

মজুরি কমিশন, পাট খাতে অর্থ বরাদ্দ ও বদলি শ্রমিকদের স্থায়ী করণসহ ৯দফা দাবিতে পাটকল শ্রমিক লীগ সিবিএ নন-সিবিএ পরিষদ এ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলিম ও ইস্টার্ন জুটমিল এবং যশোরের কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলে বর্তমানে ১৩ সহস্রাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে যোগ দেন। খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা মোড়ের কবির বটতলায় সড়কে টায়ারে জ্বালিয়ে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। ফলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খুলনা-যশোর মহাসড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, বিজেএমসি চেয়ারম্যান গত ২৮ মার্চের মধ্যে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেশন, বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মৌসুমে পাটক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা দাবি রয়েছে আমাদের। দাবি আদায়ে বাধ্য হয়ে কিছুদিন পর আবারো আমাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। এ ৭২ ঘন্টায় দাবি মানা না হলে আমরা পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর শ্রমিকেরা বকেয়া মজুরি, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, গ্র্যাচুইটি-পিএফর টাকা দেয়া ও বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলিম ও ইস্টার্ন মিলের শ্রমিকেরা গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

মিছিলের পরে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন : কেন্দ্রীয় পাটকল শ্রমিকলীগের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন, শ্রমিক নেতা সেলিম আকন, কাওসার আলী মৃধা, মুরাদ হোসেন, সোহরাব হোসেন, হেমায়েত উদ্দিন আজাদ ও আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মাদ।

তারা বলেন, সরকার ঘোষিত জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর রোয়েদাদসহ দাবি ও সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকদের বীমার বকেয়া প্রদান, টার্মিনেট ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, বরখাস্তকৃত শ্রমিক ও কর্মচারীদের শ্রম আদালত ও শ্রম ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ নিয়োগকৃত আইনজীবী মামলা না চালানোর পক্ষে মত দেয়া সত্ত্বেও বিজেএমসি উচ্চতর আদালতে আপিল করার ফলে মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সেটআপ অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ী করা, পাট মওসুমে পাট কেনার টাকা বরাদ্দ, উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ ৯ দফা বাস্তবায়নের জন্য এ আন্দোলন বলে তারা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, আমাদের এ সংক্রান্ত দাবিনামা বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের নেতারা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিজেএমসি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম অধিদফতর মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।

শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার ৯ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সাত দিনের আন্দোলন কর্মসূচির ডাক দেয় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগ ও সিবিএ নন সিবিএ। কর্মসূচিতে গতকালের বিক্ষোভ মিছিল ছাড়া আরো রয়েছে ৮ মার্চ সারা দেশের পাটকলে শ্রমিক সমাবেশ, ১০ মার্চ হরতাল পালনের সমর্থনে লাল পতাকা মিছিল, ১২ মার্চ ২৪ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন, ১৯ মার্চ আবারো ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৪ মার্চ ঢাকায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর