শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রলীগের ২ নেতা

মাগুরা আদর্শ কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না করে ওই টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তাঁরা। গত রোববার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় মাগুরা আদর্শ কলেজ থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের ৩৩৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় পরীক্ষা দিতে পারছে না কলেজের শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার নামে কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়া হয় রোববার। অন্যদের সঙ্গে প্রবেশপত্র নিতে এসেছিল মানবিক বিভাগের ছাত্র রিয়াজ হোসেন। রিয়াজ জানতে পারে, অন্য বন্ধুদের প্রবেশপত্র এলেও তার টা আসেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার ফরমই পূরণ হয়নি, প্রবেশপত্র আসবে কোত্থেকে। যদিও ফরম পূরণের জন্য সে টাকা দিয়েছিল কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে। এ বিষয়ে রিয়াজ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ও আমার দুই বন্ধুর কাছ থেকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ১৬ হাজার ৬০০ টাকা নিয়েছেন। কথা ছিল, ফরম পূরণ করে দেবেন তাঁরা। তবে আমাদের প্রবেশপত্র আসেনি। দুই দিন হলো ফোনও ধরছেন না ওই নেতা।’ ওই শিক্ষার্থীরাসহ ৩০ জনের টাকা ওই নেতা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করে রিয়াজ।
একই অভিযোগ মানবিক বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ইমন হোসেনেরও। ইমন বলে, ‘পরীক্ষার ফরম পূরণের কথা বলে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হুদা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিন হোসেন আমার কাছ থেকে দুই দফায় ৮ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন। ফরম পূরণে নির্ধারিত ফি যেখানে ২ হাজার ৫০০ টাকা, সেখানে ছাত্রলীগের নেতার কাছে ফরম পূরণের জন্য এত টাকা দিয়েছ কেন জানতে চাইলে ইমন হোসেন বলে, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর প্রতিবছর কিছু টাকা বেশি নিয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছাত্রলীগের নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, এবারও তাদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দেবেন। তাই তাঁদের কাছে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত করে অর্থ দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এভাবে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলে জানায় ইমন হোসেন।
এ বিষয়ে ওই কলেজের অধ্যক্ষ সূর্য কান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘বিষয়টি রোববারই আমাদের নজরে আসে। ঠিক কতজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে টাকা দিয়েছে, তা আমরা নিশ্চিত নই। বারবার বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হয়েছে, যেন অফিস বাদে কারও সঙ্গে কোনো লেনদেন না করা হয়। এরপরও কেউ যদি ছাত্রলীগ বা অন্য কারও কাছে অর্থ দেয়, সে বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।’
এদিকে এই খবর জানাজানি হওয়ার পর রোববার রাতেই ছাত্রলীগের ওই কলেজ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের মাগুরা জেলা কমিটির সভাপতি মীর মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলী হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে মাগুরা আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মীর মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের ছাত্রলীগে কোনো স্থান নেই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর