রিমান্ডের প্রথম দিন তথ্য পেলো গোয়েন্দারা?

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভির উল ইসলাম (৬২) ও ভবনের জমির মালিক প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুককে (৬৫) সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রোববার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছিন আহসান চৌধুরী আসামিদের রিমান্ডের এ আদেশ দেন। ডিবি পুলিশের পরিদর্শক জালাল উদ্দিন আদালতে তাদের হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।

অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের জামিন আবেদন করেন। এদিকে একই সঙ্গে আদালত এদিন মামলার এজাহার দেখে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।

সাত দিন রিমান্ডের প্রথম দিন নানা তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এই তথ্যগুলো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন তারা। তবে এগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দরকার নথিপত্র। আর সেই নথিপত্র রয়েছে রাজউক ও ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়নের কাছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে নথিপত্র তলব করবেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

জমির মালিক ফারুক হোসেন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, ১৮ তলা অনুমোদন পাওয়া ভবনটি অবৈধভাবে ২৩ তলা করা হয়েছে। আর সে তথ্য রাজউককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ভবনের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রূপায়নকেও অবহিত করা হয় যে, তারা নিয়ম মেনে ভবনটি নির্মাণ করেনি।

অবৈধভাবে ভবনের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে দাবি করলেও ওপরের তিনটি ফ্লোরের মালিক তাসভির উল ইসলাম তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, অনুমোদন নিয়েই ভবনটি বর্ধিত করেছেন তিনি। রাজউক থেকে রূপায়ন সে অনুমোদনও নিয়েছে।

জমির মালিক ফারুক হোসেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান, এফ আর টাওয়ারের মালিক ২০ জন। তিনি ৪৫ শতাংশের মালিক। বাকি ৫৫ শতাংশের মালিক রূপায়ন। জমির মালিক তার মালিকানাধীন ফ্লোরগুলো বিক্রি করেননি। ভবনে নিজের অফিসের জন্য রেখে বাকি অংশ ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। রূপায়নের ৫৫ শতাংশ মালিকানায় থাকা ফ্লোরগুলো ১৯ জনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

ফারুক হোসেন আরও দাবি করেন, ভবন নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে টাওয়ারটি নির্মাণের পর হস্তান্তর অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেননি। তবে নিজের ৪৫ শতাংশ ভবনের দখল নিজের কাছেই রেখেছেন।

রিমান্ডে থাকা তাসভির উল ইসলাম গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, ভবনটি ১৮ তলা নির্মাণের পর ২৩ তলা পর্যন্ত করার অনুমোদন রাজউক থেকে নেওয়া হয়েছে। সব কাগজ যাচাই-বাছাই করেই ২১, ২২ ও ২৩ তলার ফ্লোর কিনেছেন তিনি।

এ বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) এডিসি গোলাম সাকলাইন সিথিল বলেন, আমরা যেসব তথ্য অভিযুক্তদের কাছ থেকে পাচ্ছি সেগুলো যাচাই-বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও অফিস থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করছি। নথিগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে কার অবহেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ২৩ তলা বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছেন।

এ ঘটনায় ৩০ মার্চ রাতে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে ৪৩৬/৩০৪(ক)/৪২৭/১০৯ ধারায় মামলা (নম্বর ৩৭) করেন। এতে এস এম এইচ আই ফারুক হোসেন, রুপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ও তাসভির উল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

ওই দিন রাতেই জমির মালিক ফারুক হোসেন এবং ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক তাসভির উল ইসলামকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন এ মামলায় তাদের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর