শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারে নি নাইছ আকতারকে

বাবার কোলে চড়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে গেলেন নাইছ আকতার। সোমবার সকালে বাবা নজরুল ইসলাম মেয়েকে কোলে করে নিয়ে যান বগুড়ার ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। সেই কেন্দ্রের ১২১ নম্বর কক্ষের বেঞ্চে মেয়েকে বসিয়ে দেন বাবা। পরে পরীক্ষা শেষে আবার তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

নাইছ আকতারের পা আছে, কিন্তু হেঁটে চলার শক্তি নেই। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী নাইছ আকতার। কিন্তু তার রয়েছে অদম্য শিক্ষাশক্তি। হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে হয়েছে বাবার কোলে চড়ে। সহপাঠীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার দিকেই ছিল কেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি। অচল ডান হাত রেখে বাঁ হাতে দ্রুতগতিতে লিখে সবাইকে তাক লাগিয়েছে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয়ের এই এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামের নজরুল ইসলাম একজন প্রান্তিক কৃষক। তার স্ত্রী আকতার জাহান গৃহিণী। এই দম্পতির ঘরেই ২০০১ সালে জন্ম নেয় এক কন্যাশিশু। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েটি। নজরুল ইসলাম ও আকতার জাহান দম্পতির এই কন্যাশিশু নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় ডান হাতটি অচল তার।

বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রতিবন্ধী হলেও মা-বাবার কোলে চেপে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে নাইছ আকতার। লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকায় তাকে বিনা বেতনে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে।সোমবার বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নাইছ আকতার জানায়, বাবা-মায়ের কোলে চড়ে একসময় রাস্তায় বের হলে মানুষ আড় চোখে তাকিয়ে থাকতো। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালোবাসে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের সবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।

নাইছ আকতারের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়ে প্রতিবন্ধী হলেও মেধাবী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে সব কষ্ট দূর হয়েছে। ভালো ফলাফল নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক চিকিৎসা করেও নাইছকে সুস্থ করা সম্ভব হয়নি।

ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় বাবার কোলে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে নাইছ আকতার। পা থাকলেও হাঁটতে পারে না। সমাজসেবা অধিদফতরের প্রত্যয়ন অনুযায়ী পরীক্ষায় তাকে প্রতিবন্ধী কোটায় ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর