এক কেন্দ্রে ০, এক কেন্দ্রে ২

‘বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার প্রতীক নৌকা কোনো কেন্দ্রে শূন্য (০) কিংবা দুই (২) ভোট পায়, সেই প্রশ্নবিদ্ধ ও কারচুপির নির্বাচন কোনোভাবেই সুষ্ঠু হতে পারে না। তাই অবিলম্বে এই প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে কারচুপি হওয়া ন্যূনতম আটটি কেন্দ্রে আমি পুনর্নির্বাচন দাবি করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে রাতেই লিখিত অভিযোগ করেছি।’- গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) পরাজিত প্রার্থী কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটো আজ সোমবার দুপুরে কাছে এভাবেই ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন।

এর আগে রাতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান টিটো। এ সময় তার পাশে সাবেক সদ্য সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব শংকর দাসসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, নবীনগরে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে বর্তমান সাংসদ এবাদুল করিম বুলবুলের সমর্থক আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান মনির ১১৮৮ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদলের সমর্থক কাজী জহির উদ্দিন সিদ্দিক টিটোকে পরাজিত করেন। নৌকার প্রার্থী টিটো ৪৮ হাজার ৬৯০ ভোট পেলেও, বিদ্রোহী প্রার্থী মনির ভোট পান ৪৯ হাজার ৮৭৮ ভোট। কিন্তু রবিবার গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণার আগেই নৌকার প্রার্থী টিটো রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই লিখিত আবেদনে উপজেলার ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের আটটি কেন্দ্রে বড় ধরনের ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে ওই সব কেন্দ্রে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান টিটো।

কেন্দ্রগুলো হলো উপজেলার বার আউলিয়া মাদরাসা, ব্রাহ্মণহাতা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাপাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাউর ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়, শাহপুর সরকারি প্রাথসিক বিদ্যালয় ও কোনাউর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

নির্বাচন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে বার আউলিয়া কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে মাত্র ২টি (দুই) ও ব্রাহ্মণহাতা কেন্দ্রে ০ (শূন্য) ভোট পড়ে। অন্য ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে লাউর ফতেপুরে ২৮, ধনাশীতে ৩১, লাপাংয়ে ৬২, মিরপুরে ৬৬, কোনাউরে ৯১ ও শাহপুরে ১৩১টি ভোট নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন।নাম প্রকাশ করার না শর্তে স্থানীয় একাধিক বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কোনো কেন্দ্রে ‘শূন্য’ ভোট পায়, এমন অগ্রহণযোগ্য খবরও আমাদেরকে দেখে যেতে হলো। এটি বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।

তবে নির্বাচনে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এটি পরাজিত প্রার্থীর মনের জ্বালা। এমন কড়াকড়ি ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট কাটার অভিযোগ একেবারেই মিথ্যে। আর পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে রাত ১২টার পর নির্বাচন নিয়ে এমন অভিযোগ হাস্যকরও বটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান আজ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, এখনও লিখিত অভিযোগটি আমি পাইনি। শুনেছি, নবীনগরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে সেটি পেলে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব। সেই ক্ষেত্রে কমিশনই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের এ বিষয়ে কোনো এখতিয়ার নেই।

সূত্র-কালের কণ্ঠ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর