ছাত্রদল সভাপতির বয়স ৩৫ সম্পাদকের ৩১

নানা নাটকীয়তা শেষে দীর্ঘ ২৭ বছর পর সরাসরি ভোটে ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।

তারা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন। সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচিত হওয়ায় সবাই ফলাফল মেনে নিয়েছেন, দেখা যায়নি কোনো প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এখন বেশ উজ্জীবিত। বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনেও চাঙ্গাভাব। সফলভাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল শেষ হওয়ায় বিএনপির হাইকমান্ডেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।

তবে দলের একটি গ্রুপের দাবি, দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট মুক্ত হলেও ছাত্রদলের নেতৃত্ব এখন নতুন সিন্ডিকেটের কব্জায়। সিন্ডিকেটের শুধু হাতবদল হয়েছে মাত্র। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ওই সিন্ডিকেট প্রকাশ্যে ভূমিকা পালন করে। তাদের আশীর্বাদপুষ্টরাই নতুন নেতৃত্বে এসেছেন। তবে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচিত হওয়ায় তাদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ অনেকে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিনিয়র কারও অনুসারী হবেন এটাই স্বাভাবিক। নতুন নেতৃত্বও এর বাইরে নয়। তাই বলে তাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নেতা বলা যাবে না।

জানা যায়, নবনির্বাচিত ছাত্রদল খোকন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সহ-প্রচার সম্পাদক আমীরুজ্জামান আলীম, ‘হাওয়া ভবন’ খ্যাত রুম্মন হোসেন, গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এমপি সহ উত্তরাঞ্চল ‘সিন্ডিকেটের’ প্রার্থী এবং সাধারণ সম্পাদক শ্যামলের সদ্যবিলুপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টুর প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে।

ছাত্রদলের শীর্ষ এ দুই নেতার জীবনবৃত্তান্ত বার্তাবাজারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

ফজলুর রহমান খোকন:

মো. খালেকুজ্জামান ও ফরিদা ইয়াসমিন দম্পতির সন্তান খোকন ১৯৮৪ সালের ১০ জুন জন্মগ্রহণ করেন। ১০২/এ, লালবাগ ঢাকায় বর্তমানে বসবাস। তার পৈতৃক নিবাস বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পারভবানীপুর গ্রামে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে ২০০০ সালে এসএসসি, শেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স এবং ২০১০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্ট্যাডিজে অধ্যায়নরত।

২০০৩-০৪ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে রাজনীতিতে পদার্পণ তার। ২০০৫ সালের ছাত্রদলের এই হল শাখা কমিটির সহ-দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ ছাড়া সদ্যবিলুপ্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটর সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত খোকন রাজনৈতিক কারণে ২৩টি মামলার শিকার হয়েছেন। চারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে।

ইকবাল হোসেন শ্যামল:

১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল নরসিংদীর রায়পুরা এলাকায় শ্যামল জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৃত মো. গিয়াস উদ্দিন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে নরসিংদীর রায়পুরায় কর্মরত ছিলেন। শ্যামলের মা দেলোয়ারা বেগম রায়পুরা ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত শ্যামল একটি অরাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠেন। রায়পুরা আরকেআরএম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি; নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে ২০০৯ সালে অনার্স এবং ২০১০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় অধ্যয়নরত।

২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মুজিব হল শাখা ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন শ্যামল। ঢাবির ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজনৈতিক কারণে শ্যামল ইতোমধ্যে দুটি মামলার শিকার হয়েছেন। ২০১৩ সালের ২৮ মে একবার গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি।

ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বান নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলেন, ভোটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব ফিরে এসেছে। এটাকে রোল মডেল ধরে অন্য ইউনিটেও ভোটে নেতা নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর