গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)-এর দ্যা ডেইলি সান প্রত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা তুজ জিনিয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরত সাংবাদিকরা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত প্রায় ৭০ জন সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংগ্রহণ করে জিনিয়াকে বহিষ্কার এবং উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার নাসির উদ্দীনের অসুলভ আচরণ ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে তার পদত্যাগ দাবী করেন।
মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় দৈনিক যায়যায়দিন এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মূসা বলেছেন, ‘ফাতেমা তুজ জিনিয়ার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে আচরণ করেছেন তা সংবিধান পরিপন্থি এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য হুমকী। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তি হয়ে তিনি এমন হীন কাজ করতে পারেন না। এমন ব্যক্তির গোপালগঞ্জের পবিত্র মাটিতে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকার যোগ্যতা রাখেন না।’ এসময় তিনি বশেমুরপ্রবি উপাচার্য সহ অপর এক সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করেন।
দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীর সাথে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সারা বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে এ ধরনের অবিচার এবং স্বৈারাচারী আচরন প্রত্যাশিত নয়। জিনিয়ার সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।’
ঢাকা ট্রিবিউনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সোয়ায়েব রহমান সজীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চা ও মুক্তচর্চার স্থান। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করতে শিখবে, গঠনমূলক সমালোচনা করতে শিখবে। এর বিপরীতে আমরা দেখছি শিক্ষার্থীদের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে সাংবাদিকতা এবং বাক স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসকদের স্বৈরাচারী মনোভাব শিক্ষার্থী সংক্রান্ত তাদের যে ভাবনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, যে আমরা এই জন্য বিশ্ববিদ্যালয় চাই নি। বাংলাদেশে মুক্ত বুদ্ধিচর্চার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়, রাষ্ট্রের বিবেক বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসকের বক্তব্য কখনো এমন নগ্ন হতে পারেনা। আমরা বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের এমন আচরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সমাজতান্ত্রীক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারন সম্পাধক মোহাম্মদ দিদার বলেন,‘ আমি স্পষ্ট করে বলব আজকে যে প্রতিবাদী মানববন্ধন এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ। এটা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ? বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জনগণের ক্যান্টনমেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনৈতিক কাজ হবে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আজকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ক্ষমতায় আছে তারা যখন রাষ্ট্রের ক্ষমতা কে পদলেহন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় এটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, যখন এই রাষ্ট্রের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে আসবে এবং এই টাকা যখন লুটপাট করবে তখন সেই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করবে এটাই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানকাজ এবং অন্যায় ভাবে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা ও অন্যায় ভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো তার বিরুদ্ধে যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান কাজ।
এছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখা নেতারা।
উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত’ এমন শিরোনামে ফেসবুকেএকটি স্ট্যাটাসে দেয়।এই স্টেটাসের অভিযোগ তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
বার্তাবাজার/কে.জে.পি