ভর্তি পরীক্ষায় অবাঞ্ছিত করে জাবি উপাচার্যকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে আগামী ১লা অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ করার আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা। একই সাথে উপাচার্যকে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ের জন্য অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনাকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেয়।

গত কয়েকদিন ধরে তিনদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের সমাধানে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে দীর্ঘ তিন ঘন্টা আলোচনা করেও সমঝোতায় পৌছতে ব্যর্থ হলে আন্দোলনকারীরা এ সিদ্ধান্ত নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার তার নৈতিক অধিকার নেই। আগামী পহেলা অক্টোবরের মধ্যে তাকে সসম্মানে পদত্যাগ করতে হবে। নতুবা কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া হবে। এর মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে।’

এসময় আন্দোলনকারীরা আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে (২২ সেপ্টম্বর থেকে ২ অক্টোবর) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে সকল পরীক্ষাকেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক তারেক রেজা, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূইয়া, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ দিদার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, জাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান, বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষন পরিষদের আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন শিশির, আরিফুল ইসলাম আদিব প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য গত বছরের ২৩ অক্টোবর ১৪৪৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য গত ১ মে টেন্ডার আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হলগুলো নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা।

নির্মাণকাজ বাধাহীনভাবে সম্পন্ন করতে গত ৯ আগস্ট উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও তার পরিবারের নেতৃত্বে শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা বাটোয়ারা করে দেওয়ার খবর কিছুদিন আগে গণমাধ্যমে আসে। যার ফলে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষকসহ আন্দোলনে নামেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশ থেকে হল স্থানান্তরসহ দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য আন্দোলনকারীরা তিন দফা দাবিতে গত ৩, ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর টানা তিনদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করলে সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনায় বসে উপাচার্য। এতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশে নির্মাণের সিদ্ধান্তকৃত তিনটি হলের মধ্যে দুটি অন্যত্র স্থানান্তর করলেও অমীমাংসিত থেকে যায় আন্দোলনকারীদের গুরুত্বপূর্ণ দাবি দুর্নীতির বিষয়টি। দুর্নীতির বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে পরামর্শকের সাথে পরামর্শের জন্য ৩ কার্যদিবস (১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় নেন উপাচার্য।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে ছয় শতাংশ চাঁদা দাবিসহ অন্যান্য অভিযোগে গত শনিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে পদ হারান সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। পরদিন রবিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার ফোনালাপের অডিও ফাঁসের পর উপাচার্য ও শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে দুর্নীতির বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দুর্নীতির বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যাপারে ৩ কার্যদিবস সময় আজ অতিবাহিত হলে আলোচনায় বসে দু’পক্ষ। কিন্তু তাতে কোন সমাধান না আসায় উপাচার্যকে ভর্তি পরীক্ষায় অবাঞ্ছিতসহ পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারীরা।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর