বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার

প্রিয় জন্মভূম বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর ১৬২ দেশে সরকারী হিসাব অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা ৮৯ লাখেরও বেশি। তবে বেসরকারী হিসাবে এই সংখ্যা এক কোটি বিশ লাখের কিছু বেশি। এই প্রবাসীরা শুধু ব্যক্তিক প্রয়োজনেই যাননি যে, তার প্রমাণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁদের অবদান। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিউক্লিয়াস হিসাবে কাজ করে। রেমিটেন্স আমাদের মোট অভ্যন্তরীণ আয় বা জিডিপির ৩০ ভাগ। তাই জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১০ হাজার ৫২১ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন ডলার।

জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় যৌবন কাল। সেই সময়েই সবকিছু বিসর্জন দিয়ে উন্নত জীবনের আশায়, উচ্চশিক্ষার টানে কিংবা অন্য যে কারণেই বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে যাক না কেন, তাঁর মন পড়ে থাকে এই মা মাটি ও জল-হাওয়াতেই। আর এ কারণেই এখানে রেখে যাওয়া স্বজনদের, এখানকার মাটিকে তাঁরা কখনো ভুলতে পারেন না। নিজেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের অর্থ নিয়মিত পাঠিয়ে তাঁরা এ দেশকে গড়ে তোলেন পরোক্ষে। এই অবদান এতটাই যে, ২০০৮ সালে আমেরিকায় শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা যখন পুরো বিশ্বকে চোখ রাঙিয়েছে, তখন বাংলাদেশের জন্য বর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রবাসীরা। কোনো অনুমাননির্ভর কথা নয়, সম্পূর্ণ গবেষণালব্ধ ফলাফল এটি।

শুধু অর্থের বিচারেই প্রবাসীদের অবদান বোঝা সম্ভব নয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা এক কোটির বিশ লাখের বেশি বাংলাদেশি বেকারত্বের সংকট মোকাবিলাতেও সরাসরি অবদান রাখছেন। রয়েছে তাঁদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক সংগঠন। অথচ এই সবকিছুর পরও এই প্রবাসীদের নানা অবজ্ঞার মুখে পড়তে হয়। নতুন পাসপোর্ট বা নবায়নের সময় এবং পুলিশ ক্রিয়ারেন্সের সময় হয়রানি এবং অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। আসা যাওয়ার পথে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে প্রবাসীরা নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়েন। বিদেশে দূতাবাসে সহযোগীতার নামে হয়রানির স্বীকার হয় প্রতিনিয়ত প্রবাসীরা। ওদের মনে হয় ( দূতাবাস কর্মচারীরা) দেশ থেকে যাওয়া ভিআইপিদের লাগেজ টানা ওদের কাজ। তারপর নিজ দেশে স্বজনদের কাছে যখন তাঁরা ফিরে আসেন, তখন থেকেই তাঁদের মুখোমুখি হতে হয় নানা হেনস্তার।

প্রবাসজীবন মানেই নিঃসঙ্গতা। তবু দেশ ও দেশের মানুষকে বুকে পুষে এই নিঃসঙ্গতা মেনে নিয়ে প্রবাসীরা করে যান কঠোর পরিশ্রম। কত ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তাঁদের। অথচ বাংলাদেশ, এর সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদানের বিপরীতে এটা কখনোই তাঁদের প্রাপ্য হতে পারে না। এটা সত্য যে, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যেমন বাংলাদেশ থেকে কুয়েত গেলে খরচ হয় ৭/৮ লাখ টাকা আর আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যেতে খরচ হয় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যদি কোন প্রবাসীর মুত্যু হয় বিদেশে তাঁর লাশ দেশে আনার জন্য অপেক্ষা আর হয়রানির শেষ নেই। প্রতিদিন গড়ে ১১ জন প্রবাসী শ্রমিকের লাশ আসছে দেশে তার মধ্যেই ৬২`/. প্রবাসীর মূত্যর কারণ ঋণ নিয়ে বিদেশ গিয়ে শোধ করার চাপের কারণে। প্রবাসীরা কোনো প্রতিদানের আশায় দেশের অর্থনীতি ও সমাজে অবদান রাখেন না। তাঁরা এই অবদান রাখেন দেশের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়িত্বশীলতা থেকে। তাঁরা শুধু চান বাংলাদেশ তাঁদের আপন বলে জানুক। বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের বুকে টেনে নিক। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রতিনিয়ত চলমান রাখা এই প্রবাসী জনগোষ্ঠী শুধু চায় প্রতিদান না হোক, অবজ্ঞা যেন না করা হয়।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর