শোভন-রাব্বানীকে বাদ দেয়া প্রসঙ্গে মুখ খুললেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ-সম্পাদক

ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ মাস আগেই পদ হারালেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। তাদের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সংগঠনটির এ দুই পদে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেলেও কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি সময়ের জন্য সব সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন তারা।

শোভন-রাব্বানীর ওপর চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কে যখন আক্রান্ত ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ তখন নতুন দুই শীর্ষনেতার ওপর দায়িত্বটা অনেক বেশি ভারী বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিতর্ক ও কালিমা মুছে সংগঠনটিকে আবার কিভাবে পুরনো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নেবেন তারা তা দেখতে চায় দেশবাসী।

তাই আগামী সম্মেলনের আয়োজন, ছাত্রলীগ নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা, অভিযুক্তদের নিয়ে সিদ্ধান্ত, সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করা ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

এই ১০ মাসে সফল সম্মেলন আয়োজন করাই প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তিনি। সব সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সমাপ্তির পর পর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন করবেন বলেও জানান তিনি।

ইতিমধ্যে কয়েকটি সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা আছে বলে জানান লেখক। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব পাওয়ার আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজে সম্মেলন হয়ে গেছে। কিন্তু কমিটি হয়নি।

আমরা প্রথমে এগুলো দিয়ে শুরু করব। সামনে কিছু সম্মেলনের তারিখও নির্ধারণ করা আছে। আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো ঘোষণা করব। শোভন-রাব্বানীসহ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগের প্রসঙ্গ আনলে তিনি বলেন ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ইমেজ ক্ষুণ্ন না হোক সেদিকে নজর রাখব।

তিনি ষ্পষ্টভাবে বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মাদক, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সাধারণ ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ এলে প্রমাণসাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

ইতিমধ্যে এসব অপরাধে ছাত্রলীগের যেসব নেতা অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের বাদ দেয়ার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন প্রশ্নে লেখক ভট্টাচার্য বলেন, হ্যা, ১৯ জনের পদ শূন্য করা হয়েছে। নতুন করে ৭২ জনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছে।

সংগঠনের নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে বিতর্কিতদের নিয়ে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেব। তারপর তাদের নাম প্রকাশ করব। যোগ্যদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নামে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে আসতে অর্থ লেনদেন, একাধিক নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হয় লেখক ভট্টাচার্যকে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদক স্বাক্ষর করে কমিটি দিয়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা প্রথমে আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলে কর্মী সম্মেলন করব। তারপর যেসব ক্যাম্পাসে ঝামেলা হচ্ছে সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের প্রটোকলের কারণে জনদুর্ভোগের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, সভাপতি ও আমি একসঙ্গে এক মোটরসাইকেলে করে মধুর ক্যান্টিনে আসি। যাওয়ার বেলায়ও এক মোটরসাইকেলেই যাই। এ বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন, আমাদের জন্য রাস্তায় কোনোরকম ঝামেলা, প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়।

প্রসঙ্গত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লেখক ভট্টাচার্যের পরিবার। তাই ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগ দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন লেখক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র।

২০১৩ সালে হল কমিটিতে সহ-সভাপতি হন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। শোভন-রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

যশোরের মনিরামপুরের ছেলে লেখক ওই এলাকার এমপি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাতিজা।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর