পুলিশ কর্মকর্তার কাছে পাওনা টাকা দাবি করায় প্রবাসীকে মিথ্যা মামলা

কুমিল্লার মুরাদনগরে পুলিশ কর্মকর্তার নিকট পাওনা টাকা দাবি করায় জাহাঙ্গীর আলম বাবুল নামে এক সৌদি প্রবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাবে প্রাননাশের আশংকায় ওই প্রবাসী এখন বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। উপজেলার ধামঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। বাবুল ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রশীদের ছেলে। তাকে একাধিক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানীর অভিযোগে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন,ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন, মবিন মিয়া, আলিম সরকার, বাচ্চু সরকার, আমিন সরকার সুজন মিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার লোকজন।
সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম বাবুল গত ১১ বছর যাবত সৌদি আরবের আল কাছিম নগরীতে ফার্নিচারের ব্যবসা করে আসছেন।

২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী একই গ্রামের মুজিবুর রহমানের মেয়ে মাহবুবা রহমান নিশার সাথে তার সামাজিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। নিশার বড় বোনের জামাতা (বর্তমানে)পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান খোকন এবং চাচা পুলিশ পরিদর্শক মোবারক সরকার। বিয়ের পর বিদেশে চলে যাওয়ার পর আত্মীয়তার সুত্র ধরে বাবুলের নিকট থেকে তার ভায়রা (বর্তমানে) গাজীপুর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান খোকন ৮ লাখ টাকা হাওলাত নেয়। এরপর শশুর এবং শাশুরী মিলে আরো সাড়ে চার লাখ টাকা হাওলাত নেয়। প্রবাসী বাবুল এক বছর পর দেশে এসে তার পাওনা ফেরত চাইলে এনিয়ে ভায়রা শশুর-শাশুড়ীর সাথে ঝগড়া বিবেদ সৃস্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে ওই প্রবাসীর সাথে তার স্ত্রী মাহবুবা রহমান নিশার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ভায়রা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খোকনের ভাই রোবায়েত হোসেন জনির সাথে বিবাহ দেয়া হয়। বিচ্ছেদের পর স্থানীয়রা ওই পাওনা টাকার বিষয়টি শুরাহার চেষ্টা করে।

কিন্তু এতে ওই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তার পরিবার কোন সাড়া দেয়নি। এনিয়ে প্রবাসী বাবুল ভায়রা পুলিশ পরিদর্শক খোকন ও চাচা শশুড় পুলিশ পরিদর্শক মোবারক সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে সে পাওনা টাকা আবারো দাবি করলে ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সাবেক শাশুড়ী শাহনাজ বেগমকে বাদী করে তার বিরুদ্ধে ভাংচুর লুটপাট শ্লীলতাহানী ও চুরির অভিযোগ এনে মুরাদনগর থানায় একটি সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় প্রবাসী বাবুলকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।

প্রায় এক বছর মামলা পরিচালনার পর প্রবাসী বাবুল আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেয়ে সাউদি আরবে চলে যায়। সম্প্রতি বাবুল দেশে এসে চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় পাওনা টাকা ফেরত পেতে এলাকার সাহেব সরদারদের দ্বারস্থ হলে তারই সাবেক শ্যালক রেজাউল করিম সাফায়াতকে বাদী করে তার বিরুদ্ধে থানায় আরেকটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের তদন্ত করতে মুরাদনগর থানার এসআই জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য: এর আগের মামলায়ও এসআই জালাল উদ্দিন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ওই প্রবাসীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল।

পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, আমি প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম বাবুলের নিকট থেকে হাওলাত বাবদ কোন টাকা পয়সা নেইনি। তার কাছে এ ধরনের কোন প্রমানাদি নেই, তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই। মুলত আমার শালিকা তাকে ডিভোর্স দেয়ার পর থেকে সে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করছে।
পুলিশ পরিদর্শক মোবারক সরকার বলেন, জাহাঙ্গীর আলম বাবুল একজন বখাটে প্রকৃতির ছেলে, যার ফলে আমার ভাতিজি তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্তকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন বলেন, প্রবাসী বাবুলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করছি, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর