প্লিজ স্যার একটু দয়া করুন, নতুবা আমরা বাঁচব না

‘প্লিজ স্যার, একটু দয়া করুন। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৮৫১ জন গেটকিপার ৫ মাস ধরে বেতন-বোনাস পাচ্ছি না। আপনি আমাদের মুখের দিকে তাকান। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।

এখন কেউ ঋণও দেয় না, দোকানদার বাকিতে মালও দিচ্ছে না। আমাদের অনেকের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান অসুস্থ- চিকিৎসা করাতে পারছি না। প্লিজ স্যার, একটু দয়া করুন। আমাদের বেতনের ব্যবস্থা করুন। নতুবা আমরা বাঁচব না।

স্যার বিশ্বাস করেন, বেতন না পাওয়ায় পেটে শক্ত করে কাপড় বেঁধে রাখি। অনেক সময় শুধু পানি খেয়েও থাকি।’ সচিবালয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সোমবার দুপুরে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন গেটকিপার সুমন মিয়া।

মন্ত্রীর রুমে তখন আরও ২০ জন গেটকিপার দাঁড়িয়ে সুমনের সঙ্গে কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করছিলেন। কেউ কেউ কান্না করছিলেন, কেউ আবার হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় মন্ত্রীর দু’চোখও ছলছল করে ওঠে। ঠিক ওই সময় মন্ত্রণালয়ের গেটের পাশে আরও প্রায় আড়াইশ’ গেটকিপার অবস্থান করছিলেন।

গেটকিপাররা জানান, অস্থায়ী ভিত্তিতে চুক্তিতে কাজ করছেন তারা। প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেতেন। সেই হিসেবে ৮৫১ গেটকিপারের মাসিক বেতন আসে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা।

৫ মাসে তাদের বকেয়া বেতন ৬ কোটি ১৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ঈদ বোনাসসহ উৎসব ভাতাও পাননি। অনেকে সন্তানের পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

তাদের কথা শুনে মন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা চিন্তা করো না। আমি দেখছি। আমার খুব খারাপ লাগছে। তোমরা সাধারণ মানুষ, তোমাদের প্রচেষ্টায় ট্রেন স্বাভাবিকভাবে চলছে। ৫ মাস ধরে বেতন-বোনাস প্রদান না করা খুবই অন্যায়। তোমরা আমাকে বিষয়টি আগে জানাতে।

কষ্ট করে এত মানুষ এসেছ। ২-৩ জন আমার অফিসে আসতে, বাসায় আসতে। কথা দিলাম- তোমাদের সব বেতন পাবে। বেতন প্রদানে কারও কোনো ব্যর্থতা, অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা গাফিলতি থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্ত্রীর এমন আশ্বাসে ২-৩ জন গেটকিপার অন্য দুজনকে বলে, ‘তোমরা দুই জন দৌড়ে গেটে যাও, স্যার (মন্ত্রী) বলেছেন, আমাদের সব বেতন হবে। সবাইকে বলে দাও, স্যারের কথা।’ এ সময় রেলমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে ছবি তোলেন।

ওই সময়ও কেউ কেউ কান্না করছিলেন। বলছিলেন, ‘স্যার আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবে। আপনার দয়ায় দ্রুত বেতন পেলে আমরা বেঁচে যাব।’ এদিকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে রেলমন্ত্রী গেটকিপারদের সঙ্গে কথা শেষ করেই রেলপথ সচিবকে ডেকে পাঠান। গেটকিপারদের দেয়া দরখাস্ত সচিবের হাতে দিয়ে নির্দেশ দেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করুন।

রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিষয়টি খুবই কষ্টের। ৮৫১ জন গেটম্যান ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। স্যার (মন্ত্রী) নির্দেশ দিয়েছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বেতন পরিশোধের।

তিনি আরও বলেন, এসব গেটকিপার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া। ২টি প্রকল্পের আওতায় তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। বিষয়টি খুবই অমানবিক। তারা ২৪ ঘণ্টা গেটে পাহারা দেন। তাদের বেতন না পাওয়াটা আমাদের জন্যও লজ্জাজনক।

বেশ কয়েকজন গেটকিপারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বাধ্য হয়ে প্রায় ৩শ’ গেটকিপার রেলভবনে এসেছিলেন। স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। রেলমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত বেতন পরিশোধ করা হবে। এ আশ্বাসের পরও যদি তাদের বেতন না হয় তাহলে না খেয়ে মরতে হবে।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর