তিন বছর ধরে কাতারে ইউপি মেম্বার, জানতেন না এলাকাবাসী

নাটোরের লালপুর উপজেলার ১০ নম্বর কদিমচিলান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ওয়ার্ড সদস্যের নাম মো. আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু মেম্বর। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৭ মাস পরে জীবিকার উদ্দেশে পাড়ি দেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে।

কিন্তু এই বিষয়টি তার নির্বাচনী এলাকায় মানুষ জানতেন না। অথচ এলাকায় না থেকেও অবলীলায় সরকারি ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে যাচ্ছেন তিনি।দীর্ঘদিন এলাকায় ইউপি সদস্যকে না পেয়ে এলাকাবাসী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ইউএনও’র কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান করা হলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবু মেম্বর নামের ওই ব্যক্তি নিজ এলাকা গোধড়ায় দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসলে তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন তার।

চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি অবগত করেন। কিন্তু তাতে কোনো সুরাহা না পাওয়ায় গত ২৭ আগস্ট ইউএনও বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন এলাকাবাসী। অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।

আবু মেম্বর নামে পরিচিত ওই ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সাত মাস পর থেকেই প্রায় ৩ বছর ধরে কাতারে অবস্থান করছেন। চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় নিয়মিত উত্তোলন করছেন সরকারি বেতন-ভাতা।

বিষয়টি জানতে ওই ইউপি সদস্যের বাড়িতে গেলে প্রথমে নিজ মুঠোফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে কথা বলিয়ে দেন ইউপি সদস্যের স্ত্রী মাসুদা বেগম।

কিন্তু তদন্তের স্বার্থে বিষয়টি সম্পর্কে দ্বিতীয়বার জানতে গেলে ইউপি সদস্যের কাতারে থাকার কথা অস্বীকার করেন তার পরিবার। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন তারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আবু মেম্বর এলাকায় না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা (ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা) থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে ক্ষমতাসীনদের ভোগান্তির শিকার হন তারা। চেয়ারম্যানের অনুমতিক্রমে বিদেশ গিয়ে কাতারে থেকেই স্থানীয় সকল কাজকর্ম করেন বলে অভিযোগ তাদের।

এ বিষয়ে কদিমিচিলান ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা জানান, ইউপি সদস্য কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না। ওয়ার্ডের সব দায়-দায়িত্ব তিনি নিজেই পালন করেন। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে সরকারি ভাতার টাকা ইউপি সদস্যের পরিবারের কাছে তুলে দেন তিনি।

লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘কোনো ইউপি সদস্য অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারেন না। সে আইন বহির্ভূত কাজ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বি বলেন, ‘কোনো ইউপি সদস্য তিনটি কার্যকরী মিটিংয়ে অনুপস্থিত না থাকলে তার সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় তিনি কীভাবে পদে বহাল থেকে সরকারি ভাতা ভোগ করলেন, তা আমার জানা নেই। তবে তদন্তপূর্বক অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর