সিরাজগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের একডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ,সহকারী শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন কুটক্তিসহ নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরনবী ২০১৭ সালে যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তার লাভ করে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের অর্থসহ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছেন। এর প্রতিবাদ করলেই সহকারী শিক্ষিকারদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ তাদের অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন।

শুধু তাই না ওই প্রধান শিক্ষক তার ফেসবুক ওয়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন কুটক্তিমূলক পোস্ট ও কমেন্ট করেন। এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের ৫ জন সহকারী শিক্ষকই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ায় বিভিন্ন সময় কথাবার্তায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে নানা বাজে মন্তব্য করে থাকেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

প্রধান শিক্ষকের এহেন আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পাঁচ সহকারী শিক্ষিকা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। জানা যায় সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পলি খাতুন গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় তিনি ৫দিনের সিএল ছুটি চাইলে প্রধান শিক্ষক নূরনবী তাকে ছুটি দিতে অস্বীকার করেন।

এতে শিক্ষিকা পলি খাতুন নিরুপায় হয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট আবেদন করলে তিনি তার ছুটি মঞ্জুর করেন। পরে ছুটি শেষে বিদ্যালয়ে যোগদান করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষক তার সাথে চরম দূর্ব্যবহার করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহকারী শিক্ষিকা,ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রধান শিক্ষক অসুস্থ্যতার ভান করে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা পলি খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমার সাথে চরম দূর্ব্যবহার ও অশালিন ভাষায় গালাগাল করেছেন যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষিকা আরিফা পারভীন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরনবী যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে বিদ্যালয়ের স্লিপ ফান্ডের অর্থসহ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন বরাদ্দকৃত অর্থ এককভাবে নিজের খেয়াল খুশিমত খরচ করে শুধুমাত্র বিল ভাউচারে আমাদের স্বাক্ষর নেন। এর প্রতিবাদ করলেই সহকারী শিক্ষিকারদের সাথে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণসহ তাদের অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন।

শুধু তাই না ওই প্রধান শিক্ষক তার ফেসবুক ওয়ালে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিভিন্ন কুটক্তিমূলক পোস্ট ও কমেন্ট করে থাকেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী ওই বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম সেলিম বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে, একজন গর্ভবতী শিক্ষিকার ছুুটি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরনবী সহকারী শিক্ষিকা পলি খাতুনের বিষয়টি স্বীকার করলেও স্লিপ ফান্ডের অর্থ আত্মসাতসহ অন্যান্য অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, প্রধান শিক্ষক নূরনবীর বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর