জবির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি-সম্পাদক আস্থাভাজন কর্মীদের চাঁদাবাজি

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে রদবদলের এক দিনেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি’র দোকান থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন জবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তরিকুল-রাসেলের আস্থাভাজন কর্মীরা। চাঁদা কম দেয়ায় খিঁচুরির পাতিল ছিনিয়ে নেয়া,দোকানীকে মারধর করেছে নেতা-কর্মীরা। চাঁদা ও মারধরের প্রতিবাদে সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় দোকানীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,জবি ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চাঁদাবাজি করে আসছিল। দোকান বসানোর সময় প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম (অফেরতযোগ্য) নেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে রদবদলের ফলে ‘আমরা পুনরায় বহাল’ ঘোষণা দিয়ে আবারো তারা এ চাঁদাবাজি শুরু করেছ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি রদবদলের রাতেই ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল এবং পরদিন মিষ্টি খাওয়ার নাম করে টিএসসিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক তরিকুল ইসলাম-শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল তাদের আস্থাভাজন কর্মীরা দোকানীদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। দোকানীরা চাঁদা কম দেয়ায় এসময় তাদের মারধর করে। এক খিঁচুড়ি দোকানীর পাতিল ছিনতাই করে নিয়ে আসে এবং ক্যাশবাক্স থেকে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। জবি টিএসসিতে ধর্মঘটের ফলে ভোগান্তীতে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানী বলেন, রোববার সন্ধ্যায় অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ, ৭ম ব্যাচের আলমগীর মুন্সী, বাংলা বিভাগ ৭ম ব্যাচের সাইফ আহমেদ লিখন, ম্যানেজমেন্ট ১০ম ব্যাচের সামিউল তাছাহাব শিশির এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইংরেজি বিভাগ ৯ম ব্যাচের কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন টিএসসিতে এসে প্রত্যেক চা দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা ও সিংগারা-সমুচার দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা তাৎক্ষনীক চাঁদা দাবী করে। এসময় দোকানীরা এতো টাকা দিতে পারবে না বলে জানালে দোকানী ইমনকে পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। তাকে বাঁচাতে এলে আরো দুই দোকানীকে মারধর করেছে তারা। এসময় সব দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে হাতিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও সব সিগারেটের প্যাক ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একটি মাত্র বিকাশের দোকান সেখান থেকেও ক্যাশের পাশাপাশি ৬ হাজার টাকা বিকাশ করে নিয়ে যায়।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, টিএসসিতে কমপক্ষে ৯টি চা দোকান, খিচুরি দোকান ৪টি, ১টি সমুচা-সিংগাড়ার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান, ১টি শরবতের দোকান ও ১টি বিকাশ-ফ্লাক্সির দোকান। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশেই সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ি, চটপটির দোকানসহ হালিমের দোকান। চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা হিসেবে মাসে ৪০ হাজার ৫ শ, সমুচা দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ হিসেবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুরী দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ হিসেবে ৪৮ হাজার ও রিচার্জের দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে মাসিক ৩ হাজার টাকা চাঁদা তুলে থাকে। এছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেয়া হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে আসছিল জবি ছাত্রলীগের নেতারা।

জবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর বলেন, টিএসসিতে যারা চাঁদাবাজি করে তারা একসময় আমার কর্মী ছিল এখন নেই। তবে আপনার সাথে মিছিল করছিল কেন এমন প্রশ্ন এড়িযে যান তিনি।

জবির টিএসসিতে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বার্তা বাজারকে জানান, ছাত্রলীগের কোন কর্মী চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগে কোন চাঁদাবাজের অবস্থান নাই। আপনারা আমাদের জানান কারা কারা চাঁদাবাজি করে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিব। সদ্য বিলুপ্ত কমিটি নিয়ে বলেন, ছাত্রলীগে নেওয়া পূবের্র সকল সংগঠনিক সিদ্ধান্ত বলবৎ তাই ক্যাম্পাসে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।

এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা বাজারকে জানান, র‌্যাব ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চাঁদাবাজদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করছি। খুব শীঘ্রই আমরা এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও নেবো। এবিষয়ে সকলের সহযোগিতা দরকার।

কোতয়ালী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইফুল আলম মুজাহিদ বার্তা বাজারকে বলেন,আমি চাঁদাবাজদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স আছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই র্তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিব। আমার জোনে কোন চাঁদাবাজি চলবেনা।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর