এবার ফাঁস হলো জাবির প্রক্টর ও ছাত্রলীগ নেতার ফোনালাপ

এবার ফাঁস হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ফোনালাপের অডিও। কোটি টাকা লেনেদেন নিয়ে ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতার ফোনালাপ ফাঁসের কয়েক ঘণ্টা পরই নতুন ওই অডিও প্রকাশ পায়।

প্রক্টরের ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি হামজা রহমান অন্তর। হামজা নিজেই এই ফোনালাপ ফাঁস করেন। এ ব্যাপারে আগে থেকে জানিয়েছিলেনও তিনি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়।

পদত্যাগ করার আগে রাব্বানী অন্তরের মোবাইলে ফোন দিয়েই টাকা লেনদেনের খবর নিয়েছিলেন। ওই বিষয়ে জানতেই প্রক্টর ফিরোজ-উল- আলম তাকে ফোন করেন। এই ফোনালাপেও টাকা লেনদেনের তথ্য ওঠে আসে। কথোপকথনের সময় অন্তর দৃঢ়তার সঙ্গে প্রক্টরকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত এই টাকা ভাগ পেয়েছে।

অন্তর: স্যার আসসালামুআলাইকুম

প্রক্টর: অন্তর তুমি তোমার ফোন থেকে এমন একটা অডিও বানাইলা কেন?

অন্তর: স্যার আমি তো কিছু জানি না ।

প্রক্টর: তোমার ফোন থেকেই তো কথা হয়েছে।

অন্তর: কথাতো হয়েছে দুই পক্ষ থেকে স্যার, আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার এইটা শিউর থাকেন।

প্রক্টর: তুমিইতো কথা বললা, তোমার ফোন থেকেইতো কথা বলাই দিলা।

অন্তর: আমার ফোন থেকে কথা হইছে, কিন্তু ঐ পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিলো। এখন রেকর্ডটা কি ঐ পাশ থেকে হইছে না কি গোয়েন্দা সংস্থা করছে সেটাতো আমি জানি না।

আরো পড়ুন: ‘ফোনালাপ’ জাবির টাকা কার কার পকেটে

প্রক্টর: কবে তোমার সাথে এই কথা হইছে।

অন্তর: স্যার পরশু দিন রাতে যখন রাব্বানী ভাইদের কমিটি ভেঙ্গে যাচ্ছিল। তখন আমারে হঠাৎ করে ফোন দিছে রাব্বানী ভাই। তখন আমার সাথেই ছিলো। তখন আমি বললাম ভাই আমিতো বেশি কিছু জানিনা আপনি সাদ্দাম ভাই এর সাথে কথা বলেন। পরে সাদ্দাম ভাইয়ের সাথে কথা বলল। কথা বলে আমার ফোন তো লক দেওয়া আছে আমার ফোনে তো কিছু করার সুযোগ নাই। ফোন কাটার সাথে সাথেই ফোনটা আমার হাতেই চলে আসে।

প্রক্টর: কিন্তু তোমার ফোন থেকেই তো কথপোকথনটা হল রাব্বনীর সাথে।

অন্তর: স্যার আমার ফোন থেকে কথপোকথন কিন্তু ঐ পাশে তো রাব্বানী ভাই ছিলো।

প্রক্টর: রাব্বনীর যদি এমন রেকর্ড থাকে তাহলে এতো দিন করে নাই কেন? এতো দিন তোমার সাথে কথা বলে আজকে সেটা পাবলিসড করতেছে কেন? ঐ দিন করতো, কালকে করতো। নিজের হাতে ক্ষমতা নাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়টাকে নষ্ট করতে চায় কেন?

অন্তর: স্যার আমি তো স্যার বেশি কিছু বলিনাই স্যার আপনি হয়তো শুনছেন। আমি ধরাই দিছি ফোনটা।

প্রক্টর: হ্যাঁ তুমি ধরাই দিছো ফোনটা। কিন্তু আল্টিমেটলিতো ফোনটা তো তোমার।

অন্তর: স্যার আমার ফোনে ফোন দিতে পারে না স্যার? সে আমার নেতা না?

প্রক্টর: না ফোন দিতেই পারে। কিন্তু এই যে গল্প গুলো এই গল্প গুলো আগে বলেনি কেন? যদি এই গল্প গুলো থাকে?

অন্তর: স্যার এই গল্প গুলো তো এখন টক আব দ্যা টাউন। এটা তো অস্বীকার করারও কিছু নাই স্যার।জাহাঙ্গীরনগরের এইটা তো একটা চলমান ইস্যু। আমি কি এইটা অস্বীকার করবো।রাব্বনী ভাই যখন আমারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করছে আমি কি অস্বীকার করবো? সে আমার নেতা না?

প্রক্টর: তুমি কি অস্বীকার করবা, তোমাকে কি অস্বীকার করতে বলছি? তোমাকে তো আমি কিছু অস্বীকার করতেই বলি নাই। তুমি স্বীকার করবা বা অস্বীকার করবা সেটা তো তোমার ব্যাপার।

অন্তর: স্যার আপনি তো ভালো করেই জানেন স্যার। আমি হয়তো বাহিরে এক রকম বলবো কিন্তু আমার ঘরে যখন কেউ জিজ্ঞাস করবে তখন তো আমি আর মিথ্যা বলবো না।

প্রক্টর: আমি তোমাকে তো সত্য মিথ্যা বলতে বলছিনা।

অন্তর: আমার ফোন থেকে কিছু হয় নাই স্যার এইটা শিউর থাকেন।

প্রক্টর: কিন্তু এই যে সাদ্দাম যে কথা গুলো বলছে এই কথা গুলো কতটুকু ট্রু?

অন্তর: স্যার ট্রুর বিষয়টা তো স্যার যাস্টিফিকেশনের দায়িত্ব আমার না। রাব্বনী ভাই যদি সাদ্দাম ভাইর সাথে কথা বলতো সেটাও ফাঁস হইতো। কিন্তু আমার ফোন থেকে কথা বলে ফাঁস হয়ে তো এটা কিছু হয়ে আসে না। এই জিনিসটা তো স্যার সবাই জানে আপনি ও জানেন স্যার।

প্রক্টর: না আমি বলি তোমাকে, ফোনটা যেহেতু তোমার। দায়টা কিন্তু তোমাকেই নিতে হবে।

অন্তর: স্যার ফোন আলাপ ফাঁস হয় না? নির্বাচনের আগে দেখেন নাই আওয়ামীলীগ নেতাদের…….

প্রক্টর: হ্যাঁ হয়। কিন্তু যেহেতু তোমার ফোনে করছে তুমি কি দায়টা এড়াইতে পারো?

অন্তর: স্যার আমার কোন দায় নাই স্যার কারণ আমি করি নাই স্যার।

প্রক্টর: তুমি কর নাই ঠিক আছে, কিন্তু ধর বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে এত বড় ষড়যন্ত্র….. ওর অস্তিত্বে টান পড়ছে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এরকম করবে সে?

অন্তর: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র বিষয়টা এরকম না স্যার। ছাত্রলীগ নিয়ে ও তো স্যার ষড়যন্ত্র চলতেছে স্যার গত চার পাঁচ দিন ধরে। এখন স্যার ………

প্রক্টর: এইটা তো জাহাঙ্গীরনগরের ইস্যুর সাথে না তাদের বিরুদ্ধে তো পুরা গ্লোবাল ইস্যু আছে।

অন্তর: স্যার, আমি জাহাঙ্গীরনগরে না পড়লেও ছাত্রলীগ করতাম স্যার। আমার কাছে স্যার ছাত্রলীগ আগে।

প্রক্টর: সেটা তোমকে আমি বলি নাই। ছাত্রলীগ আগে ভালো কথা। কিন্তু এখন জাহাঙ্গীরনগরে যেহেতু পড় জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ কর।

অন্তর: জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ তো আর জাহাঙ্গীরনগরের সাথে তৈরি হয় নাই। এইটা সেন্ট্রল ছাত্রলীগ এর একটা ইউনিট।

প্রক্টর: তুমি কিন্তু উল্টা দিকে কথা বলতেছ অন্তর।

অন্তর: না স্যার, আমি ল্যাজিকাল কথা বলতেছি স্যার, আমি আমার বাহিরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি একটা কথা বলবো কিন্তু ঘরের লোক জিজ্ঞাস করলে আমি কি স্যার উল্টা পাল্টা কথা বলবো? আমি কি বলবো যে ভাই হ্যাঁ এরকম কিছু ঘটে নাই।

প্রক্টর: আমি তোমারে বলি, তুমি জাহাঙ্গীনগরে যদি না পড়তা জাহাঙ্গীনগরের ছাত্রলীগ হিসাবে কিন্তু ইস্টাবলিস হতে না। জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগ হিসাবেই তোমার পরিচয়।

অন্তর: স্যার, ক্যাম্পাসের ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচ পর্যন্ত টাকা পাইছে স্যার, আমি এটা গোপন রাখার কে স্যার?

প্রক্টর: আচ্ছা তোমাদের কে টাকা দিলো আর কে টাকা দেয় নাই সেটা দেখার দায়িত্ব কি আমার?

অন্তর: স্যার আমাকে ও তো টাকা সাধছে আমি তো নেই নাই স্যার।

প্রক্টর: না তোমাকে কে সাধছে না সাধছে সেটা তো আমি জানি না। কে দিয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার নাকি।

অন্তর: স্যার আপনি যদি চান আমি আপনাকে প্রমান দেখাতে পারবো স্যার। ৪৪ থেকে ৪৫ ব্যাচ ও টাকা পাইছে স্যার।

প্রক্টর: আরে বাবা এইটা নিয়ে কেন তুমি পড়ে আছ? টাকা কে দিছে আমি তো সেটা জিজ্ঞাস করছি না।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর