বর্ষার মৌসুমে একহাতে বই, অন্য হাতে জুতা নিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের

মাত্র প্রাথমিকে পড়ছেন।এমন সময় শিশু শিক্ষার্থীদের সাধারনত আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যমে পাঠদান করে থাকেন শিক্ষকরা।কিন্তু একটি সরকারি স্কুরে দেখা মিলল ভিন্ন কিছু।খোনে আন্দকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা আয়ত্ত করার কথা সেখানে কোমলমতি শিশুদের সকালের সূচনাটা হয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।যার প্রভাব পড়ে পাঠদানে। প্রতিনিয়ত এক হাতে বই ও অন্যহাতে জুতা নিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। এতে অনেক সময় স্কুল মাঠের জলাবদ্ধ পানিতে পড়ে বইসহ স্কুল ড্রেস ভিজে যায়। ভিজা ড্রেসে পাঠদান করতে হয় শিশু শিক্ষার্থীদের।

বর্ষা মৌসুমের পুরোটা সময় বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকে স্কুল মাঠ। বছরের অর্ধেক সময়জুড়ে এমনই চিত্র দেখা মেলে ভোলার মনপুরা উপজেলার দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বছরের অর্ধেকটা সময় জলাবদ্ধ মাঠ থাকায় জাতীয় সংগীতসহ শপথবাক্য পাঠ হয় না স্কুলটিতে। এমনকি কোমলমতি ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে না পারায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে।

বছরের পর বছর প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়ে ও সুরাহা করতে পারেনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়াও জলাবদ্ধ মাঠে সাপ ও জোঁকের কামড়ের ভয়ে স্কুল আসেছে না শিক্ষার্থীরা এমন কথাও জানান ওই প্রধান শিক্ষক।

সরেজমিন দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দলবেঁধে শিক্ষার্থীরা আসছে স্কুলের সামনে। এসেই পরনের প্যান্ট ভাঁজ করে উপরে ওঠাচ্ছে। পরে পায়ের জুতা খুলে এক হাতে ও অন্যহাতে বই নিয়ে জলাবদ্ধ মাঠ পেরিয়ে স্কুলে ঢুকছে শিক্ষার্থীরা।

কেউ আধাভিজা ও কেইবা পুরো ভিজে গেছে। এরপর আধাভিজা ও পুরো ভিজে নিয়ে পাঠদান শুরু। স্কুল মাঠ পানিতে ডুবে থাকায় খেলাধুলা করতে না পেরে ক্লাস রুমে হৈ চৈ করে আনন্দ নেয়ার চেষ্টা।

ওই স্কুলের ৩য় শ্রেণির তানভির, রাহিম, চতুর্থ শ্রেণির রাহাত ও পঞ্চম শ্রেণির তানিয়াসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এই স্কুলে পড়ালেখা করতে ভালো লাগে না। খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকে, খেলতে পারি না। স্কুলে প্রবেশ করার সময় বেশিরভাগ সময় পানিতে পড়ে গিয়ে কাপড় ভিজে যায়। ভিজা কাপড়ে পড়তে হয়। এই সময় শিক্ষার্থীরা স্কুলের মাঠ ভরাট করে দেয়ার দাবি করেন।

দাসেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চপলা রানী দাস জানান, বছরের অর্ধেকটা সময় স্কুলের মাঠে পানি জমে থাকে। এতে জাতীয় সংগীতসহ শপথবাক্য পাঠ করানো যায় না। শিক্ষার্থীরা স্কুলে প্রবেশ করার সময় সাপ ও জোঁকের কামড়ের ভয় পায়। পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিনের এই সমস্যাটা প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষক সমস্যাটির কথা জানানোর পর উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

হাজিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহরিয়ার চৌধুরী দীপক জানান, স্কুলের মাঠের জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে প্রধান শিক্ষক এসেছেন। বর্ষা শেষে আগামী শীতে মাঠ ভরাট করে দেয়া হবে।

বার্তবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর