মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন: পবিত্র আশুরা আজ

মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের একটি দিন পবিত্র আশুরা। কারবালায় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটি (১০ মহররম) বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা শোকের আবহে পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও আজ মঙ্গলবার আশুরা পালিত হবে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এতে অংশ নেবে হাজার হাজার মানুষ। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা।

গতকাল সোমবার ইমামবাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত শিয়া মুসলিম কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা স্মরণে ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করছে বিভিন্ন রীতি-নীতি। তাজিয়া মিছিল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অনুষ্ঠান ঘিরে হোসেনি দালান এলাকা ও আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

পুরো এলাকা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীয় সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। এবার আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানে প্রবেশের ক্ষেত্রে রয়েছে যথেষ্ট কড়াকড়ি। পুলিশের পাশাপাশি ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

ইমামবাড়া সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় মিছিলটি হোসেনি দালান থেকে বের হয়ে বকশী বাজার লেন, কলপাড়, উমেশ দত্ত রোড, উর্দু রোড ঢাল, লালবাগ চৌরাস্তা, এতিমখানা রোড, আজিমপুর মেটারনিটি, নীলক্ষেত মোড়, সিটি কলেজ, ধানমণ্ডি-২, রাইফেলস স্কয়ার হয়ে ‘অস্থায়ী কারবালায়’ (বিজিবি সদর দপ্তরের গেটের উল্টো দিকে) মিছিলটি শেষ হবে। এ ছাড়া ১ মহররম থেকে প্রতিদিনই ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠান, তাজিয়া মিছিল, শোকসভা, শোক মজলিস, মর্সিয়া মাতম ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করছে শিয়া মতাবলম্বীরা।

এবার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ইমামবাড়ার স্বেচ্ছাসেবক মাহফুজ আলী বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করে আসছি। এবার মহরম উপলক্ষে অফিস থেকে পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি। এটা আমাদের কাছে আলাদা গুরুত্ব বহন করে।’ ইমামবাড়ার মহররমকেন্দ্রিক নানা আয়োজন দেখতে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে এখানে আসতাম। এখনো নিয়মিত আসি।’

মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি প্রতিবছর আশুরার সময় এখানে আসি। এবারও এসেছি। এখানে এলে আলাদা কিছু অনুভব করি।’ স্কুলপড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা বন্ধুরা মিলে ১ মহরম থেকে প্রতিদিন আসি। আগামীকাল (মঙ্গলবার) আবার আসব।’

হোসেনি দালান ইমামবাড়ার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মির্জা মো. নকি বলেন, ‘আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলেও সকাল ১০টায় তাজিয়া মিছিল বের হবে। চার শ বছরের ঐতিহ্য আমাদের এই মিছিল। প্রতিবছরের মতো এবারও তাজিয়া মিছিলে প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করছি।’

আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার মডেল থানার ওসি সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বরাবরের মতো এবারও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এখানে কোনো অঘটন ঘটার সম্ভাবনা নেই।

বার্তাবাজার/এম.কে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর