শ্রদ্ধা ভালবাসায় সাতক্ষীরার প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এম এ জলিলের শোকসভা অনুষ্ঠিত

ফুলে ফুলে ভরে উঠলো ঈষিকা জলিল বেদী। শ্রদ্ধায় ভালাবাসায় সিক্ত হলেন বিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক চেতনার মানুষ চিত্রশিল্পী এমএ জলিল। অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলেন গ্যালারি উপচে পড়া শুভাকাংখীরা। অশ্রসজল হয়ে উঠলো যেনো তার রেখে যাওয়া সব চিত্রকর্ম। অন্য আলোয় উদ্ভাসিত হলেন সদ্য প্রয়াত চিত্রকর এমএ জলিল।

‘অপলকে নেত্রে চেয় থাকি আমি, হৃদয়ের গভীর অনুভবি আমি, তোমার মুক্ত চিন্তা আমাকে বিশুদ্ধ করে তোলে বারবার। আমাকে স্বপ দেখায় ভবিষ্যতের’। এমন সব অভিব্যক্তি হৃদয় গাঁথা নিয়ে গেলেন তার সুহৃদরা।

শনিবার বৈকালিক ভাদ্রের স্গ্ধি রোদ ছায়ায় এভাবেই নিজেদের হৃদয়ের ভাষা তুলে ধরলেন তার পথের সাথীরা। বললেন জলিল চলে গেছে। কিন্তু জলিলের শিল্পকর্মে ঠাঁই পেয়েছে আমাদের গভীরে। আমরা তাকে স্মরণে রাখবো তার চিত্রশালায় মনোযোগ দিয়ে। বারবার তাকে বুঝতে চাইবো, চিনত চাইবো অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ, মুক্তমনা মানুষ, বাঙ্গালি চেতনার ধারক বাহক চিত্রশিল্পী এমএ জলিলকে। তাকে নিয়ে আমরা ভালবাসবো বাংলাদেশকে, জীবন ও প্রকৃতিকে।

ভালবাসবো শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের, ভাষা শহিদদের, শরিক হবো সব গণতান্ত্রিক মিছিল সংগ্রামে। শিল্পী জলিলের তাই মৃত্যু নেই, অনন্তলোক শিল্পী জলিলের রং তুলি থেমে থাকবে না থেমে যাবে না তার পথচলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই নাগরিক শোকসভা। শিল্পী জলিলের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অশ্রসজল অনুষ্ঠানমালা। বক্তারা তাদের হৃদয় ভেঙ্গে তুলে ধরেন আপন মানুষটির কথা।

‘তুমি রবে নীরব হৃদয়ে মর্মে’ কন্ঠশিল্পী আবু আফফান রোজবাবুর দরাজকন্ঠে গাওয়া গানের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। ঘণ্টাব্যাপী প্রামান্য চিত্র প্রদর্শনের সাথে সাথে উঠে এলো সব ভক্ত সুহৃদের প্রাণের কথা। তারা নিজেদের মতো করে শিল্পী জলিলের কথা বললেন। শিল্পী জলিলকে উদ্দেশ্য করে কবি দিলরুবা আবৃত্তি করলেন ‘এবার সময় হয়েছে নিকট, এখন সময় হয়েছে যাবার’। আর শিল্পী চৈতালি মুখার্জীর কন্ঠে ভেসে এলো ‘মরনছর পর আমার স্মরণে গড়ো না তাজমহল’।

স্মরণ অনুষ্ঠানের অতিথি জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন ‘ আমি শ্রদ্ধা ভালাবাসা জানাতে এসেছি। আমি মৃত্যু নয় জীবনের কথা বলতে এসেছি। আমি এমএ জলিলের স্বপ্নের কথা বলতে ও শুনতে এসেছি। আমি ব্যথিত, আমি শোকস্তব্ধ, আমার আক্ষেপ কেনো আমি জলিলের ঈষিকায় অংশ নিতে পারিনি। জলিল মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। জলিলের স্বপ্নের তুলিতে সব বাধা ভেঙ্গে যাক, আলোকময় সমাজের লক্ষ্যে। আমার আক্ষেপ তার রং তুলিতে আর অংকিত হবে না নিষ্প্রাণ প্রাণসায়ের খাল। তার তুলিতে আর নতুন করে উদ্ভাসিত হবেনা ভোরের আলো, বিশুদ্ধ রুচিশীল শিল্প সংস্কৃতি, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা সংগ্রাম। মুক্তমনের প্রতিধ্বনি ঝংকতে হবেনা কোনো দিন। তবু জলিল বেঁচে থাকবেন তার শিল্পকর্মে’।

নাসরিন খান লিপি গাইলেন জলিলের প্রিয় গান ‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো। আমিও আর নদীর মতো ফিরে আসবো না কোনোদিন——- একলা এসেছিলাম আমি একলাই চলে যাবো, আসবো না ফিরে কোনোদিন’।
শোকস্তব্ধ অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন এমএ জলিলের মতো ক্ষণজন্মা মানুষকে স্মরণে রাখতে হবে। এমএ জলির তার শিল্প বাতিঘর ঈষিকায় গড়ে তুলছিলেন এক মিলন মেলা।

শিল্পী এমএ জলিল নাগরিক শোকসভা আয়োজক কমিটির আহবায়ক , স্মরণ অনুষ্ঠানের সভাপতি তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন ‘আমরা জলিলকে হারিয়ে আরও জলিলের সন্ধান চাই। আমরা তার শিল্প কর্মকে প্রাণবন্ত করে স্মরণে রাখতে চাই। তার স্বপ্ন পূরণে গড়ে তুলতে চাই জলিল আর্ট গ্যালারি। আমি জলিলকে বারবার দেখতে চাই, যেমনটি দেখছি ৪৪ বছর ধরে। জলিলের চিত্রকর্ম আমাদের অণুপ্রাণিত করে। আমাদের সংগ্রামী করে তোলে। আমাদের মুক্তচিন্তার বাতি জ্বালায়। নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি অ্যাডভোকট ফাহিমুল হক কিসলুর স্বাগত বক্তব্যে আর শোকসভা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুমের সঞ্চালনায় শোকাবহ অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে হৃদয়স্পর্ষে। সুহৃদদের হাত দিয়ে ‘অন্য আলোয় শিল্পী জলিল’ এর মোড়ক উন্মাচিত হয়। এ সময় প্রয়াত শিল্পীর একটি প্রতিকৃতি উঠে আসে তার পত্নী লতিফুন নাহার লতার হাতে।

সর্বশেষ শিল্পী শামীমা পারভিন রত্নার কণ্ঠে ভেসে এলো ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাকে, আমি বাইবো না , বাইবো না মোর খেয়া তরী এই ঘাটে। চুকিয়ে দেবো বেচাকেনা, মিটিয়ে দেবো লেনাদেনা, বন্ধ হবে আনাগোনা এই ঘাটে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর