সিরাজগঞ্জে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কিনেই অর্থ লুটপাট

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ১৮৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্লান (স্লিপ) প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ নামমাত্র কাজ দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে লোপাটের অভিযোগ উঠেছে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়,২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রায়গঞ্জ উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে ৫০ হাজার থেকে ৮৫ হাজার টাকার স্কুল লেভেল ইম্প্রুভমেন্ট প্লান (স্লিপ) ফান্ডের মোট ১ কোটি ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পায়।

এ অর্থ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের যথাসময়ে স্কুলে উপস্থিত হওয়া এবং স্কুল ছুটির পরে প্রস্থানের নিশ্চয়তা বিধানে সরকার বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বারক নং ৩৮.০০.০০০০.০১০.০২.০১৯.২০১৮-১১২ তারিখ ২৬ জুন ২০১৯ এর আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-সচিব আছমা সুলতানার স্বাক্ষরিত একটি স্বারকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিন্তু ১ জুলাই উপ-সচিব আছমা সুলতানার স্বাক্ষরিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বারক নং ৩৮.০০.০০০০.০১০.০২.০১৯.২০১৮-১১৭ এ আদেশটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

এ দিকে এমন নির্দেশনা মেনে উপজেলার ১৮৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কিনলেও কাগজ কলমে তিন মাস পূর্বেই হাজিরা মেশিন ক্রয় সম্পন্ন করে এ বাবদ ব্যয় দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করেছে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক/ শিক্ষিকারা। যদিও অত্র উপজেলার কোন বিদ্যালয়ে বাস্তবে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন নেই।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, এ মেশিন কিনতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বেশী খরচ না হলেও একটি চক্র উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে এ বাবদ ২০-২৫ হাজার টাকার খরচের ভাউচার ধরিয়ে দিয়েছে স্কুল প্রধানদের হাতে। এবং স্লিপ ফান্ডের অর্থ দিয়ে নামমাত্র কাজ করেই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে এ বাবদ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্য ৫০ থেকে ৮৫ হাজার টাকার খরচের ভাউচার ধরিয়ে দিয়ে অর্থ উত্তোলন করেছে বিদ্যালয়ের প্রধানরা।

নিয়ম অনুযায়ী উপকরণ ক্রয় শেষে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) প্রত্যয়ন দেখে ঐ অর্থ বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর কথা। অথচ বায়োমেট্রিক মেশিন ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ না কিনেই ভুয়া-বিল ভাউচারে বিদ্যালয়গুলোর অ্যাকাউন্টে এক কোটির ও বেশি টাকা পাঠিয়েছে রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের স্লিপ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ের মেয়াদ নীতিমালা অনুযায়ী ১০ জুলাই শেষ হয়েছে। যদিও রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সেটিকে বাড়িয়ে ২৮ জুলাই বেধে দিয়েছিলেন।

তবে কাজের মেয়াদ গড়িয়ে পরবর্তী অর্থ বছর চলে আসলেও বিদ্যালয় গুলোতে স্লিপ ফান্ডের সরকারি অর্থ যথার্থ ভাবে ব্যবহৃত না হওয়ায় সচেতন অভিভাবকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

এমন তথ্যসূত্রে গত সপ্তাহ যাবত উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা যায়, হাজিরা মেশিন ক্রয় সংক্রান্ত যে ভাউচার তৈরি করা হয়েছে তাতে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ৯ হাজার,আবার কোনোটিতে ২০ হাজার টাকা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ে এ মেশিন লাগানো হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রায়গঞ্জ উপজেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমেই তাদের কাছ থেকে হাজিরা মেশিনের জন্য ভুয়া-ভাউচার দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করেছে সব বিদ্যালয়। তবে স্থগিত থাকায় এ পর্যন্ত হাজিরা মেশিন বিদ্যালয় গুলোতে আসেনি। ভাউচারে হাজিরা মেশিন ক্র‍য় সম্পন্ন হয়েছে বাস্তবে নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বার্তা বাজার’কে প্রধান শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষা অফিসের নির্দেশ অনুযায়ী এমন ভাউচার তৈরি করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

এদিকে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার অগ্রিম ভাউচার ও কাজে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বার্তা বাজার’কে জানান, পরবর্তী আদেশ পেলেই এ অর্থ দিয়ে হাজিরা মেশিন কেনা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ বার্তা বাজার’কে বলেন, বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার আদেশটি মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার আগ মূহুর্তে হাজিরা মেশিন কেনা বাবদ স্লিপ ফান্ডের অর্থ ব্যয় করার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া অবশ্যই সরকারি অর্থ ব্যয়ের ভাউচার ও উপকরণের মিল থাকতে হবে।

বার্তাবাজার/ডব্লিওএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর