প্রেমে রাজি না হওয়ায় স্কুলছাত্রীর মুখে বিষ ঢেলে হত্যা চেষ্টা

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর মুখে বিষ ঢেলে হত্যাচেষ্টা চালায় একদল বখাটে তরুণ।ওই স্কুলছাত্রীটি বর্তমানে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। চিকিৎসকরা বলছেন তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি নির্যাতিতের মা-বাবা ও স্কুল শিক্ষকদের।

পুলিশ ঘটনার আটদিন পর অভিযোগ আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর জড়িতদের মধ্যে প্রধান দুই তরুণকে গ্রেফতার করেছে।ওই ছাত্রীর স্বজনরা জানান, কটিয়াদী উপজেলার বেতাল গ্রামের দরিদ্র বাবার মেয়ে সে। সে বেতাল বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

সে স্কুলে এবং প্রাইভেট পড়তে যাওয়া-আসার পথে বেতাল গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে তারিফ এবং পার্শ্ববর্তী মসুয়া গ্রামের হাইদুল ইসলামের ছেলে আরমান উত্যক্ত করত এবং তার হাতে প্রেমপত্র দেয়ার চেষ্টা করত।সে তাদের প্রেমপত্র গ্রহণ না করে তার মা-বাবা ও স্বজনদের মাধ্যমে ওই দুই তরুণের অভিভাবকদের কাছে বিচার দেয়। এতে এই দুই বখাটে তরুণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

গত ২৯ আগস্ট সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ওই দুই তরুণ এবং তাদের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনকে নিয়ে পথরোধ করে জোরপূর্বক ধরে বোতল দিয়ে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে তাকে একটি গর্তের ভেতর ধাক্কা দিয়ে ফেলে পালিয়ে যায়।

তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

বর্তমানে সে ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকগণ। এ পরিস্থিতিতে তার দরিদ্র পিতাকে প্রিয় সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গহনা বিক্রির পর চড়া সুদে ধার নেয়া টাকাও ফুরিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা হলে সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।সে জড়িতদের ফাঁসি দাবি করে বলে, এদের এ শাস্তি দেখে যেন আর কোনোদিন আর কেউ কোনো মেয়ের ওপর এ ধরনের বর্বরোচিত নির্যাতন চালানোর কথা ভাবতেও না পারে।

এ সময় জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, খুব খারাপ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এনে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। মালার অবস্থা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।

ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ধার-দেনা করে এবং সুদের ওপর টাকা নিয়ে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়ের ওষুধের যোগান দিচ্ছেন। মেয়েটি সুস্থ হয়ে ওঠার পর হাসপাতালের বিল চুকিয়ে তাকে কীভাবে নিয়ে আসবেন সে চিন্তায়ই তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বেতাল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, ওই ছাত্রী স্কুলের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যতম। তার ওপর এ বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় জড়িতদের তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি আবু শামা মোহাম্মদ ইকবাল হায়াত জানান, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান দুই অভিযুক্ত তরুণ তারিফ ও আরমানকে আটকের পর মামলা রুজু করে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের অন্য সহযোগীদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

সূ্ত্র: যুগান্তর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর