অশীতিপর বৃদ্ধা, নাম সাধনা। বয়স কত নিজেও জানেন না। অনুমান করে বললেন ৮১ বছর। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন, বড় ছেলেও নিখোঁজ। এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। অতীতে বহুবার বয়স্কভাতার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেও কার্ড পাননি। এরপর সড়ক দুঘর্টনায় আহত হওয়ায় এখন আর বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্যও যেতে পারেন না।
কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার একটি ভোটের কদর বেড়েছে। রোববার লৌহজং থানার কনকসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেয়ার জন্য সকাল সকাল চলে আসেন তিনি। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়ে আসায় তাকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি, মেয়ে গেছেন জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে। তাই ভোট কেন্দ্রের সামনেই বসেছিলেন তিনি। এমন সময় সেই উপজেলার তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে ঘিরে ধরেন। নানা জনে নানা প্রলোভন দেখান, যাতে তাদের প্রার্থীকে ভোট দেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এক সমর্থক তাকে বলেন, ‘নৌকা মার্কায় ভোট দিও। বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য তোমার নাম ঢুকাইছি। এবার কার্ড হয়ে যাবে।’
এ সময় কীভাবে নৌকায় সিল মারতে হবে তা দেখিয়ে দেন তিনি। এরপর সাংবাদিকদের দেখে সরে পড়েন ওই কর্মী।
সাধনা বলেন, সকালে ভোট কেন্দ্রে এসেই বয়স্ক ভাতা না পাওয়ায় আক্ষেপ করছিলেন। এই সুযোগে ওই লোকটা তাকে এই লোভ দেখায়। লোকটাকে তিনি এর আগে কোনো দিনও দেখেননি।
সাধনা আক্ষেপ করে আরও বলেন, একটি বয়স্ক ভাতার জন্য অনেক ঘুরেছি, কিন্তু হয়নি। তাও ভোট দিতে এসেছি। কারণ ভোট দেয়া নিজের অধিকার।
এদিকে লৌহজং থানার মৌছাঃ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হলদিয়া উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাক্ষ্মণগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি। কোথাও কোনো অপ্রীতিকার ঘটনা ঘটেনি।
হলদিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস তালুকদার বেলা সাড়ে ১১টায় বলেন, এ কেন্দ্রে ভোটার ২০২৫ জন। কোনো অপ্রীতিকার ঘটনা ঘটেনি। বেলা ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ’।
ব্রাক্ষ্মনগাঁও বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসা আবদুল করিম নামে এক ভোটার জানান, দুপুর পর্যন্ত ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যায় না।