আমরা শিল্পায়ন চাই, তবে কৃষিজমি নষ্ট করে নয়: প্রধানমন্ত্রী

শিল্পের উন্নয়নে সরকারর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই বেশি বেশি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠুক। তবে কৃষি জমি নষ্ট করে এখানে-সেখানে শিল্প গড়ে উঠুক আমি তা চাই না। কৃষির দরকার আছে, কারণ কৃষির মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হবে। আবার আমরা শিল্পায়নও চাই। কারণ শিল্পায়ন ছাড়া কোনো দেশ উঠে দাঁড়াতে পারে না।

রোববার (৩১ মার্চ) রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিল্পমেলার উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটি-পানি সবকিছুই ব্যবহার করা যায়। আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। আমাদের দেশে শিল্প রয়েছে, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের অনেক বিকাশ হয়েছে। কিন্তু বৃহৎ শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। তাই বৃহৎ শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা যায় সে জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।

শিল্পায়নের জন্য ব্যাংক সুদ হার কমানোর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ব্যাংকের সুদ কমানোর উদ্যোগ নিলাম। ব্যাংকগুলোকে আমরা বেশকিছু সুযোগ-সুবিধাও করে দিলাম। কিছু ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশে নামল। অন্য ব্যাংকগুলো করল না। তারা সুযোগ চাইল কিন্তু সুদের হার কমাল না। এখন তাদের দিকে নজর দিতে হবে। তারা ঠিকঠাকমতো ভ্যাট দেয় কি না দেখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে ৭৮ লাখ শিল্প-কারখানা বেসরকারিখাতে রয়েছে। আমরা বেসরকারিখাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ-বিমান, হেলিকপ্টার, শিল্প-কারখানা, টেলিভিশন-রেডিও বলেন ব্যবসা-বাণিজ্যের সব খাত আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা চাই বেশি বেশি বিনিয়োগ হোক, কর্মসংস্থান হোক।

কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেয় না উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন, তারা শিল্প-কারখানা ঠিকই স্থাপন করেন। কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, নদী নষ্ট হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছু টাকা খরচ হবে। এখানে শিল্প-মালিকদের কার্পণ্য কেন সেটা আমার একটা প্রশ্ন। আমাদের দেশ ও পরিবেশ তো বাঁচাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ শোধ না করার প্রবণতা অনেকের মধ্যে রয়েছে। এই প্রবণতা আমাদের দূর করতে হবে। ঋণ ফেরত দিলেই ব্যাংকগুলো সহজেই সুদের হার কমাতে পারবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা সবচেয়ে বেশি ব্যাংক-বীমা করেছি। তাদের সুযোগ-সুবিধাও দিয়েছে। কৃষকরা এখন ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না। শিক্ষকরা ব্যাংক থেকে বেতন নিচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নদীপথ বৃদ্ধি করছি, বিভিন্ন নদী খনন ও ড্রেজিং করছি। রাজশাহী, সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু করে দিচ্ছি। আমরা একশটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। যারা শিল্পপতি আছেন তাদের বলব, আপনারা যা উৎপাদন করেন সবকিছু তো রফতানির জন্য নয়। দেশের বাজার তৈরি করতে হবে। এ বাজারটাকে আপনাদের ধরতে হবে। এ অর্থবছরে ১৭৫১ ডলার আয় থেকে ১৯০৯ ডলার মাথাপিছু আয় হবে বলে আমরা আশা করি। অনেক ঝড়-ঝাঁপটা, অনেককিছুর পরও বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আপনারাও দেশের জন্য আরও কাজ করে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, কৃষিকে আমরা যান্ত্রিকীকরণ করতে চাই, আধুনিক করতে চাই। ছেলে-মেয়েরা অনেকে লেখাপড়া করে কৃষক হতে চায়। আজকে মিঠাপানির মাছ তৃতীয় স্থান অধিকার করে আছে। সেই সঙ্গে মাছ ব্যাঙ, কাঁকড়া, কুঁচেসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী রফতানির সুযোগ আছে। শিল্পায়ন এখন আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সচিব আবদুল হামিদ, এফবিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর