দুই পদেই পরিবর্তন আনছে আওয়ামী লীগ?

গতকাল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, আগামী অক্টোবরের মধ্যে কাউন্সিল হবে। নানা কারণে আওয়ামী লীগের জন্য এবারের কাউন্সিল গুরুত্বপূর্ণ।

স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁর ঘনিষ্ঠদের কাছে এরকম ইঙ্গিত করেছেন যে, অনেক হলো আর না। এবার তিনি আর সভাপতির দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক নন। গতবার কাউন্সিলেই তিনি বলেছিলেন যে, আমি আর দায়িত্ব নিতে চাই না। আমি একজন দলের কর্মী হিসেবে থাকতে চাই। দীর্ঘদিন দলের দায়িত্ব পালন করেছি। আমারও ক্লান্তি আছে। আমিও ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ফলে নতুন নেতৃত্ব আসা প্রয়োজন। নতুনের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মীদের আবেগ অনুভূতির কাছে তিনি পরাস্ত হন। পরাস্ত হয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এবার তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছেন অনেক হয়েছে আর না। এবার প্রথমে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিত্ব পদ ছাড়বেন এবং আগামী নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও নেবেন না। সম্প্রতি একটি বিদেশী টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর এই মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন।

শুধু সভাপতি নয়, আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদকও এই কাউন্সিলের মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক রাখার ব্যাপারটি নিশ্চিত ছিল কিন্তু বর্তমান শারীরিক অসুস্থতার কারণে তার বিকল্প চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ সুস্থ হয়ে ফিরলেও তিনি মন্ত্রিত্ব ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে কতটুকু সক্ষম থাকবেন সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই বলেছেন, তাঁর শরীরটা আগে দেখতে হবে। যেহেতু পদ্মা সেতুসহ সড়ক ও পরিবহন খাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে সেগুলো সম্পন্ন করাই ওবায়দুল কাদেরের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে বলে অনেকে মনে করছেন। এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের অক্টোবরের কাউন্সিলে কি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুটো পদেই পরিবর্তন আসবে এবং আসলে কে হবে? এই প্রশ্ন নিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে নানারকম জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, অক্টোবর অনেক দূরের। তার আগে অনেক কিছুই ঘটতে পারে, অনেক পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের যদি সুস্থ হয়ে আসার পরই বুঝা যাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের অবয়ব কী হবে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, এবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। আওয়ামী লীগ ভারতের কংগ্রেসের আদলে একজন কার্যকরী সভাপতির পদ সৃষ্টি করতে পারে বলে একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে। সেখানে সজীব ওয়াজেদ জয় বা বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকে এই কার্যকরী সভাপতির এই পদে যুক্ত করা হবে। যদি আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা আরেক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন সেক্ষেত্রে কার্যকরী সভাপতির পদ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের ক্ষমতা এবং কার্যকারিতা বাড়ানোর একটি উদ্যোগও চলছে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে। কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত যদি শেখ হাসিনা অনড় থাকেন তাহলে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব কাকে দেয়া হবে এনিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম গুঞ্জন ও চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, সভাপতি পদে যদি শেখ হাসিনা না থাকেন তবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাউকেই সভাপতির পদে দেওয়া হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু পরিবার ছাড়া সভাপতির দায়িত্ব অন্য কেউ গ্রহণ করলে দলের ঐক্য ও শৃঙ্খলা অটুট রাখা একটা দুঃসাধ্য কাজ হয়ে পড়বে বলে অনেক নেতারা মনে করছেন।

তবে সাধারণ সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগে একাধিক বিকল্প রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফের কথা বিবেচিত হচ্ছে।

তবে এখনও অনেক পথ বাকি আছে। অক্টোবর আসতে আসতে অনেক সময় বাকি। আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল যারা রাজনৈতিক বাস্তবতা, রাজনীতি ও দেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাঁদের কৌশল পরিবর্তন করে। সেই বিবেচনায় অক্টোবর পর্যন্ত নেতৃত্বের অবয়ব কী হবে তা এখনই বলা যায় না। তবে অক্টোবর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে যে আওয়ামী লীগের মধ্যে আলাপ আলোচনা হবে বিস্তর, তা হলফ করেই বলা যায়।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর