৯৪ বছর বয়সেও জুটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড

প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগগুলোর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা প্রদান একটি মহতি উদ্যোগ। রাষ্ট্রিয় নিয়ম অনুযায়ী এই ভাতার একজন দাবিদার শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মন মিয়া’র স্ত্রী মমিরন। জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম সাল (১৯২৫) অনুযায়ী বর্তমানে তাঁর বয়স ৯৪ বছর। স্থানীয়রা জানিয়েছেন বাস্তবে তার বয়স একশ বছর হবে। ঠিক কত বছর পূর্বে তাঁর স্বামী মারা গেছেন সে হিসেব তার মনে নেই তবে অনুমান করে তিনি বললেন ২০ থেকে ২২ বছরের আগের কথা। অথচ এখনও তার কপালে জুটেনি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড। বৃদ্ধা মমিরনের প্রশ্নœ ‘আর কত বয়স হলে আমি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড পাবো ?

স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে দিনমজুর ছেলের সংসারে অবহেলিত হয়ে দিনাতিপাত করছেন এই মমিরন। তিন ছেলের মধ্যে এক ছেলে ঢাকাতে কাজ করে, বছরে বাড়ি আসে এক দুই বার আর বাকি দুই ছেলে দিনমজুরী করে সংসার চালায়। দুই মেয়ে বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই। স্বামী মারা যাওয়ার পর মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বয়সের ভারে অনেক আগেই কর্মশক্তি হারিয়ে নুয়ে পড়েছেন। শরীরের যা অবস্থা আগের মত কাজ কর্ম করতে পারেনা তাই অনেকটা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে বৃদ্ধা মমিরনের। প্রতিদিন অন্যের হাতের দিকে চেয়ে থাকতে হয় তাকে। কোন কোন দিন এক বেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলায় না খেয়ে থাকতে হয়। ঈদের মতো বড় উৎসবে তাঁর একটু খোঁজ নেয়ার কেউ নেই। অথচ এখনও তার কপালে জুটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার কার্ড।

’নব্বইঊর্ধ্বো এই বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, আমার দেখা মতে কত চেয়ারম্যান পরিবর্তন হলো কিন্তু আমার দিকে কেউ চেয়ে দেখলোনা। তিনি আরও বলেন আগে আমি অফিসে গিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি তবে এখন আর তাদের কাছে যাবার শারীরিক সক্ষমতা নেই।

সরেজমিনে বৃদ্ধার বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ন একটি টিনের ছাপড়ায় তার বসবাস। ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জগ, থালা-বাসন। আসবাব বলতে রয়েছে একটি চৌকি আর এক কোণে রয়েছে কিছু লাকড়ী। ঘরের ভেতরেই গজে উঠছে বিভিন্ন ধরনের আগাছা। একরকম বসবাসের অযোগ্য ঘরেই চলছে মমিরনের বসবাস।

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সরকার নাসিমা’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ আসেনি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে তালিকা পাঠানো হয় তার ভিত্তিতেই আমরা কার্ড সরবরাহ করে থাকি। এর বাইরেও বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার কার্ড পাওয়ার যোগ্য কেউ থাকে তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দিবো।

গতকাল সকালে তার ছেলে মানিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শুনেছি শেকের বেটি গরিবদের অনেক ভাতা দেয় কিন্তু আমার মা পাইলোনা। তিনি আরও বলেন আমি দিন মজুরির কাজ করে যা কামাই করি তা দিয়ে আমার নিজের সংসারই চলেনা তভুও চেষ্টা করি, তবে সরকার যদি আমাদের দিকে একটু তাকায় তাহলে শেষ বয়সে অন্তত ভাল থাকতো।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর