মোদিকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চায় পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চায় পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)। পাকিস্তান-ভারত দুই দেশের সাবেক দুই গোয়েন্দা প্রধান যৌথভাবে লেখা এক বইয়ে এ তথ্য তুলে ধরেছেন।

পাকিস্তান আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল আসাদ দুররানি ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধান এএস দুলাত যৌথভাবে ‘দ্য স্পাই ক্রনিক্যালস’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন।

বইয়ে প্রতিবেশি চিরবৈরী এ দুই দেশের মাঝে বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক, কাশ্মীর সঙ্কট, কারগিল অপারেশন, অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যায় মার্কিন নেভি সিলের অভিযান, কুলভূষণ যাদব গ্রেফতার, হাফিজ সাইদ, বুরহান ওয়ানী-সহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় তুলে ধরেছেন তারা।

আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল আসাদ দুররানির মতে, উভয় দেশের আন্তঃসীমান্ত উত্তেজনা ও সংঘাত এখনই বন্ধ করা উচিত। আপনি যা পাবেন তাই নিয়ে নিন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টোর বাতলে দেয়া এমন সমাধান প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে দুররানি বলেছেন, এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে উভয় দেশের কাজ করা উচিত। দুই দেশের উচিত সংঘাত থেকে সহযোগিতার দিকে এগিয়ে যাওয়া।

পাকিস্তানের এই সাবেক গোয়েন্দা প্রধান বলেন, কাশ্মীর বিতর্কের প্রত্যক্ষ কোনো সমাধান নেই। বিভক্তি কিংবা যৌথভাবে কাশ্মীর শাসন কিংবা অন্য কোনো ফরমূলা; যা নিয়ে অতীতে আলোচনা হয়েছে, এখানে প্রত্যক্ষ এবং ক্রমবর্ধমান অ্যাপ্রোচ হতে পারে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কিংবা বাস চালুর মতো ছোট ছোট পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

‘ভূট্টোর উপদেশ ছিল খুবই ভালো। আমি জানি না কেন, তার এসব প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা কি এসব চাই নাকি চাই না? এটা কি বাস্তবায়ন করা উচিত নাকি প্রত্যাখ্যান? আমরা যখন এসব চাই না, তখন কিছুই হবে না। কিন্তু কেউ যখন তার এই পরামর্শগুলো গ্রহণ অথবা বর্জনের আহ্বান জানাবে, তখন এটা আপনার নার্ভেরও পরীক্ষা। ভূট্টো বলেছিলেন, আপনি যা পান তাই গ্রহণ করুন।’

দুররানি বলেন, দুই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মাঝে শান্তি দেখতে চাইলে উভয় দেশের সরকারকে পেছনে ফিরতে হবে। উভয় দেশের মানুষকে জানাতে হবে যে, ছোট ছোট বাণিজ্য এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের মাধ্যমে সব কিছুই সহজ করা যায়।

পাক এই সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের মতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই আইএসআইয়ের কাছে অধিক পছন্দের। কারণ মোদি একজন কট্টরপন্থী; যিনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দুররানি বলেন, পাকিস্তানের জন্য মানানসই হিসেবে ভারতের নির্বাচনে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী চায় আইএসআই। কারণ কট্টরপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি ভারতকে ধ্বংস করতে পারে; যা পাকিস্তানের খাবার।

‘কট্টরপন্থীরা অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যে কারণে আইএসআইয়ের পছন্দে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। এটা আমাকে ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৯৮ সালের আগের ওই নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জয় লাভ করে। পাকিস্তানের দৈনিক দ্য নিউজে আমি একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম।

‘ভারতীয় নেকড়েকে কে ভয় পায়’ শিরোনামে লেখা ওই নিবন্ধে আমি দেখিয়েছিলাম ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে আমাদের চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই কেন। কারণ এটা আমাদের জন্য ভালো হবে। যদি বিজেপি ক্ষমতায় না আসে তাহলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে ওঠা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে।’

এই লেখা প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরে কোয়েম্বাটোরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে; যেখানে আদভানি একটি বৈঠকে বক্তৃতা করেছিলেন। আসাদ দুররানি তার বইয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হলেন শিয়াল এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ হলেন উট।

সূত্র : ইন্ডিয়া ট্যুডে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর