এক সময়ের ভিক্ষুক আজ ৮০০ গাড়ির মালিক!

দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে পেট চলত তার, বর্তমানে বড় ব্যবসায়ী তিনি। সে ব্যবসায় বছরে টার্নওভার ৩৮ কোটি টাকা!এখানেই শেষ নয়, প্রায় ৮০০ গাড়ির মালিক তিনি। ভারতের হায়দ্রাবাদ ও চেন্নাইয়ের ট্যাক্সি পরিষেবা বললে সবার প্রথমে তার সংস্থার কথাই সবাই বলে উঠবেন।

পাঠক, এমন রেখা পড়ে হয়ত আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।কিভাবে এমনটা সম্ভব।হ্যঁ, অবিশ্বাস্য হলেও রেনুকা আরাধ্য নামের এক ভারতীয় করে দেখালেন এমন কীর্তি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, এক সময় ভিক্ষা করে দিন যাপন করতেন তিনি। আজ দেশটির হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি পরিষেবা সংস্থাটি তার।

অথচ শুধু ভিক্ষাবৃত্তিই নয়, সংসার চালাতে গৃহপরিচারক, কারখানায় মেশিন চালানো ও একটি ছাপাখানার ঝাড়ু দেয়ার কাজও করেছেন তিনি।আর সেই ছাপাখান থেকেই তার উন্নতি শুরু হয়।

ভারতের বেঙ্গালুরুর আনেকাল তালুক নামক এলাকারা গোপাসান্দ্রা গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে রেনুকা আরাধ্যের জন্ম।পাঁচ জনের সংসারে খাবার খরচ যোগাড় করতে অক্ষম ছিলেন তার বাবা। বাবাকে সাহায্য করতে ছেলেবেলায় গ্রামে ভিক্ষা করতেন আরাধ্য।

এরই ফাঁকে স্থানীয় একটি স্কুলে পড়তেন তিনি। তবে বাবার কাজে হাত লাগানোর জন্য বেশির ভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারতেন না।

প্রায়ই ভিক্ষা করে আর দরিদ্রদের জন্য বিনা খরচে চাল, ডাল সরবরাহ করার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো তাকে। সেসব সামগ্রী বাজারে বিক্রি করে খাবার কিনতেন পরিবারের জন্য।

তাতেও যখন হচ্ছিল না তখন ১২ বছর বয়সে একটি বাড়িতে পরিচারকের কাজ নেন আরাধ্য। সেখানে থালাবাসন ধোয়া, বাজার করা থেকে শুরু করে গবাদি পশুর দেখাশোনাও করতে হতো তাকে।

এসবের মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকলেন আরাধ্য। বাবা মারা গেলে ১৫ বছর বয়সে সংসারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে আরাধ্যের কাঁধে।

সেই বাড়ির কাজ ছেড়ে একটি লেদ কারখানায় কাজ নেন। তারপর একটা প্লাস্টিক কারখানায় যোগ দেন।

কিন্তু সেই উপার্জন দিয়ে এতোবড় সংসার চালানো যথেষ্ট ছিল না। তাই একইসঙ্গে রাতে নিরাপক্ষারক্ষীর কাজ নেন তিনি।

এরইমধ্যে একটি ছাপাখানায় ঝাড়ুদারের কাজ পান আরাধ্য। সেখানে তার সততা ও কাজে আগ্রহ দেখে ছাপাখানার মালিক তাকে কম্পিউটারে টাইপ, হিসেব করা ও ডিজাইন করা শেখান।

সেই শিক্ষা দিয়ে একটি সংস্থার সেলসম্যান হন তিনি। সেলসম্যান থাকা অবস্থায় সতীশ রেড্ডি নামে এক গাড়ি চালকের সঙ্গে পরিচয় হয় আরাধ্যের। বলতে গেলে এরপর থেকেই তার ভাগ্য বদলা থাকে।

সতীশ থেকে গাড়ি চালানো শিখে সব কাজ ছেড়ে অ্যাম্বুলেন্স গাড়ির চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। চার বছর এভাবে অধ্যাবসায়ের পর কিছু টাকা জমান তিনি।

এরপর ২০০৬ সালে দেড় লক্ষ টাকার ঋণ নিয়ে একটি গাড়ি ক্রয় করেন আরাধ্য।

কঠোর পরিশ্রমের পর আরও ৬টি গাড়ি ক্রয় করেন তিনি। দিনে দিনে ব্যবসা বড় হতে থাকে তার। এভাবেই আজ ৮০০ গাড়ির মালিক তিনি।

হায়দরাবাদ এবং চেন্নাইয়ের যাত্রীদের ভরসা এখন রেনুকা আরাধ্যের গাড়ি। রেনুকা আরাধ্যের ট্রান্সপোর্ট সংস্থা বছরে ৩৮ কোটি টাকা লেনদেন করছে।

তবে আরাধ্যের স্বপ্ন আরও বড়। তিনি জানান, সংসার চালাতে কি না করেছি! ভিক্ষা করেছি, থালাবাসন ধুয়েছি, নাইটগার্ড হয়েছি। কখনও মালির কাজ করে সংসার চালিয়েছি। অন্যের গাছের নারিকেল পেরে দিয়েও সংসার চালিয়েছি। মাত্র ৬০০ টাকা বেতনে সেলসম্যানের চাকরি করেছি। এখন আমার কম্পানিতে এই বেতনের কোনো কর্মচারী নেই।

ব্যবসাকে আরও বড় করতে চান আরাধ্য। তার লক্ষ্য টার্নওভার ১০০ কোটি করার।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর