নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী

বরগুনার আমতলী পৌর শহরে মনিকা (১০) নামের এক শিশু নিজের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসুগী এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

এ ঘটনায় বর ও কনের মাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও অনাদায়ে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমতলী পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসুগী এলাকার রিকশাচালক জুয়েল প্যাদার দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রিকশাচালক মো. তৌফিকের ছেলে সুমনের (১৪) পারিবারিকভাবে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। শিশু মনিকা তার বিয়ের কথা জানতে পেরে শুক্রবার বিকেলে কৌশলে বাসা থেকে বের হয়ে বান্ধবী কনিকা ও ফারজানাকে নিয়ে পরামর্শ করে বিয়ে বন্ধ করার জন্য প্রথমে তারা আমতলী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে যায়। আদালত বন্ধ দেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মনিকা তার বান্ধবীদের নিয়ে আমতলী থানায় আসে।

সেখানে মনিকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ঘটনা খুলে বলে। ওসি তাৎক্ষনিক উপপরিদর্শক (এসআই) নাসরিন সুলতানাকে দায়িত্ব দিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি এসে বর সুমন, বরের মা ডলি বেগম ও কনের মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে আটক করেন।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক আমতলীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ২০১৭ এর ৮ ধারা মোতাবেক বরের মা ডলি বেগমকে দুই হাজার টাকা ও কনের মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

ভুক্তভোগী শিশু মনিকার ভাষ্যমতে, ‘আমি দুপুরে জানতে পারি শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বিয়ে হবে। বিকেলে বান্ধবী কনিকা ও ফারজানার সাথে কোর্টে যাই। সেখানে কাউকে না পেয়ে আমতলী থানায় এসে বড় স্যারকে সব খুলে বলি। আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই।’

আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমি সব ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠিয়ে বর, বরের মা ও কনের মাকে আটক করে থানায় এনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করি।’

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘এর পূর্বে অনেক বাল্যবিয়ে রোধ করেছি। সার্বিক বিবেচনায় আমার কাছে এটি একটি হৃদয়বিদারক বাল্যবিয়ে।

ধন্যবাদ জানাই সাহসী কন্যা মনিকাকে। এত অল্প বয়সে নিজে নিজের বিয়ে ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।’আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরা পারভীন বলেন, ‘সাহসী কন্যা মনিকা যতদূর লেখাপড়া করতে চায় আমরা তার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করব।’

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর