ঘাটাইলে অযত্নে অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে সাগরদিঘীর সৌন্দর্য

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ঐতিহ্যবাহী এবং পর্যটন সম্ভাবনাময় সাগরদিঘীর সৌন্দর্য এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ দখল, মাছ চাষ, পুকুরের দুই পাড়ে পোল্ট্রি ফার্মসহ নানা অনিয়ম আর অত্যাচারের কবলে ঐতিহ্যবাহী সাগরদিঘী। এক সময় এই দীঘির যৌবনের আলোক ছটায় মুগ্ধ হতো শত শত প্রকৃতি প্রেমিক দর্শনার্থী। দীঘির পাড়ঘেঁষে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে ছিল সবুজের সমারোহ। দীঘির স্বচ্ছ পানির ঢেউয়ের ফাত ফাত শব্দ আর চিরসবুজ পত্র পল্লবের নান্দনিক পরিবেশে বিষন্ন মনেও দোলা লেগে যায়। গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ রোদ্দুরে অচেনা পথিকের স্নান ও তৃষ্ণা দুই-ই মেটাতো এই দীঘি। তাছাড়াও এ দীঘিকে ঘিরে রয়েছে নানা রুপকথা আর গল্পকাহিনী। জনশ্রুতি: বহূকাল আগে পালরাজাদের শাসনামলে এ এলাকাটি ছিল ঘন বন জঙ্গলে ভরা। বন্যপ্রাণি আর জীববৈচিত্রের অভয়ারণ্য হিসাবে পরিচিত ছিল এলাটি।

জঙ্গলের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে মানুষের বসবাস। তবে পানির তীব্র সংকট ছিল এলাকাটিতে। পালরাজাদের অধীনস্থ এখানকার শাসনকর্তা সাগর রাজা তার প্রজাদের সুপেয় পানির জন্য ৩৬ একর জমিতে ২০০০ হাজার শ্রমিক আর ২ বছর সময় নিয়ে দীঘিটি খনন করেন। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে দীঘির গভীরতা পর্যাপ্ত থাকা সত্বেও রহস্যজনক ভাবে দীঘিতে পানির কোন অস্তিত্ব খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে সাগর রাজা ভীষণ চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কোন এক রাতে সাগর রাজা আদিষ্ট হন তিনি যদি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে দীঘিতে নামায় তাহলে দীঘিতে পানি উঠবে। রাজাও তাই চায়। কাজেই যেই চিন্তা সেই কাজ। রানীকে আদেশ দেয়া হলো দীঘিতে নামার জন্য। রানীও প্রজাদের সুখের কথা চিন্তা করে দীঘিতে নামার প্রয়াস ব্যক্ত করেন। দিনক্ষণ ঠিক করা হলো। নির্দিষ্ট দিনে কৌতুহলী জনতা দীঘির চারপাশে ভিড় জমায় সাগর রাজার বিষ্ময়কর সিদ্ধান্তের বাস্তব দৃশ্য দেখার জন্য। রানী দীঘিতে নামলেন। কিছুদূর যেতেই দীঘিতে পানি উঠতে শুরু করে। দেখতে দেখতে রানীর সমস্ত শরীর ডুবে যেতে লাগলো। সবাই হইহুললুর শুরু করে দিল।

রানীকে উদ্ধার করার সকল প্রকার চেষ্টা করেছিল রাজা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। রানীর সমস্ত শরীর পানিতে ডুবে গেল। প্রজাদের সুখের জন্য রানীর জীবন জলাঞ্জলীতে পূর্ণতা পেল সাগর রাজার দীঘি। কানায় কানায় পানিতে ভরে উঠল। সাগর রাজার নামেই দীঘিটির নামকরণ হল সাগরদীঘি। সনাতন ধর্মাবলম্বি লোকেরা বিশ্বাস করেন যে এখনো রানীর আত্মা রাতের আধারে ঘুড়ে বেড়ায় দীঘির পাড়ে। তাই তারা রানীর আত্মাকে শান্তিতে রাখতে বিভিন্ন পুজা অর্চনা করে থাকে। মূল পরিচিতি: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৩০ কি:মি: পুর্বে এই দীঘির অবস্থান। পাড় সহ মোট ৩৬ একর জমিতে দীঘিটির অবস্থান। দীঘির পশ্চিম পাড়ের অর্ধেক জমিতে এলজিইডি’র অস্থায়ী অফিস, বাকি অর্ধেক জমিতে গড়ে উঠেছে পল্ট্রিফার্ম, পূর্বপাড়ে সাগরদীঘি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। উত্তর পাড়ে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পাড়ে দাখিল মাদ্রাসা। দীঘির দক্ষিণ-পূর্ব পাশে গড়ে উঠেছে আরেকটি পোল্ট্রি ফার্ম।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরকারের কাছ থেকে দীঘিটি পাট্টা এনে প্রতিবছর মাছ চাষ করে। মাছ চাষ করার জন্য মাছের খাদ্য, পোল্ট্রির বিষ্ঠাসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। যার ধরুন দীঘির প্রাণ ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ভরে যাচ্ছে দীঘির তলদেশ। দুই পাড়ের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেখানে উপভোগ করবে বিশুদ্ধ বাতাস আর প্রশান্তির নিঃশাস সেখানে তাদেরকে নাক বন্ধকরে চলতে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা দীঘির সুনাম শুনে ঘুরতে আসে এবং ফিরে যায় অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা নিয়ে। দীঘির উদ্দাম সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার ব্যপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান খুব শীগ্রই অভিযান চালাবো গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যেই সাগরদিঘীকে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য সব কাজ করা হচ্ছে।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর