মেট্রোরেল প্রকল্পে অস্তিত্ব নেই ফুটওভার ব্রিজের, ঝুঁকিতে পথচারীরা

জাতীয় প্রেস ক্লাবের মূল ফটকের পাশে একটি লোহার দণ্ডে সাইনবোর্ডে লেখা ‘ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করার জন্য ধন্যবাদ’। যদিও বর্তমানে সেখানে ফুটওভার ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব নেই।

তবে কয়েক মাস আগে সেখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ ছিল। এ অংশে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় ফুটওভার ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে এ অংশে মানুষজন ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।

‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি লাইন- ৬)’ নামে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। এর আওতায় রাজধানী উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল সিটি সেন্টার পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে তা শেষ করার কথা রয়েছে।

এ মেট্রোরেল প্রকল্পটি মূল সড়কের উপর নির্মাণ করা হচ্ছে বিধায় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটওভার ব্রিজের মতো সড়কের উপর থাকা বেশকিছু ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১১টা ফুটওভার ব্রিজ ও একটি আন্ডারপাস ছিল। এর মধ্যে পাঁচটি ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ছয়টির বিপরীতে তিনটি ওভারব্রিজ করে দেয়া হয়েছে।

বাকি তিনটি অংশে বিকল্প কোনো ফুটওভার ব্রিজ করে না দেয়ায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে পথচারীদের। ভেঙে ফেলা ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসের মধ্যে রয়েছে মিরপুরের শেওড়াপাড়া মসজিদের কাছের ফুটওভার ব্রিজ, ফার্মগেট মোড়ে দুটি, কারওয়ান বাজার মোড়ের আন্ডারপাস (প্রজাপতি গুহা), শাহবাগ মোড় একটি এবং প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটওভার ব্রিজ।

এর মধ্যে ফার্মগেটের দুটোর বিকল্প ফুটওভার বিজ্র এবং কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাসের বিকল্প একটি ফুটওভার ব্রিজ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শেওড়াপাড়া, শাহবাগ ও প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটওভার ব্রিজের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না রাখায় সেখানকার পথচারীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে।

শুক্রবার মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজীপাড়া থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ঘুরে দেখা হয়, ব্যস্ততম এ মূল রাস্তার ভেতরে দিয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ চলা জায়গা ঘিরে রাখা হয়েছে।

যেসব জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ ভেঙে ফেলা হয়েছে ও নেই, সে সব জায়গায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য প্রকল্পের ঘিরে রাখা জায়গার বিভিন্ন অংশে ছেদ রাখা হয়েছে। সে সব ছেদ দিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছেন।

অধিকাংশ ছেদগুলোয় প্রকল্পের পক্ষ থেকে কিছু ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীরা জানান, রাস্তায় গাড়ির শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ এ সব ছেদ দিয়ে যাত্রীরা যাতে নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে পারেন- সে চেষ্টা করেন তারা।

শেওড়াপাড়ায় একটি ছেদে শিপন নামে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী বলেন, ‘মানুষ যেন নিরাপদে রাস্তা পারাপার হতে পারে, গাড়িও যেন ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে সে কাজ করছি।

এখানে ২৪ ঘণ্টাই আমাদের ট্রাফিক থাকে। এ রকম অন্যান্য জায়গাতেও আমাদের লোক রয়েছে।’ শিপনের পাশেই মাথায় ফুচকার বস্তা ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন দুলাল মিয়া। একটার পর একটা গাড়ি যাচ্ছিল। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রাস্তা পার হন তিনি।

দুলাল মিয়াগো জানান, এভাবে রাস্তা পারাপার হতে ভয় লাগে। তারপরও এভাবেই পারাপার হতে হয়। আগের ফুটওভার ব্রিজটা থাকলে কিংবা সেটার পরিবর্তে কাছাকাছি আরেকটি করে দিলে ভয় নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হতো না।

বলা তো যায় না, কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। এ বিষয়ে জানতে মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মো. আফতাবউদ্দিন তালুকদারের মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মেট্রোরেল প্রকল্পের কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সেখানকার অন্য কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হননি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পের মূল ও সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী, ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ ২১ হাজার টাকা খরচ হবে এ প্রকল্পে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ এবং জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ ২১ হাজার টাকা।

চলতি বছরের মে মাসে এ প্রকল্পের ওপর একটি নিবিড় পরীবিক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

তাতে বলা হয়, ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক আর্থিক অগ্রগতি ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি প্রায় ৩২ শতাংশ। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিডিপি) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ পিছিয়ে আছে।

এ সময়ে মোট অগ্রগতি ২৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ছয় হাজার ৩৫২ কোটি ২৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ছিল পাঁচ হাজার ৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্পের ২৩ দশমিক ০৪ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা দুই হাজার ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ নির্ধারিত ছিল, যার শতকরা হার ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাসে বাস্তবায়ন হার টাকার অঙ্কে এক হাজার ২৮৭ কোটি ২৬ লাখ ৪১ হাজার। শতকরা এ হার ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর