ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি: জাবিতে ফের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছুদের অনলাইনে আবেদন ফরমের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আবারো বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোট ও প্রগতিশীল ছাত্র জোট।

বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে মুরাদ চত্বরে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সদস্য মিখা পিরেগুয়ের সঞ্চালনায় ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জনসাধারণের। এখানকার প্রতিটা সম্পদ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের টাকায় গড়ে তোলা। কিন্তু সাধারণ মানুষের সন্তানেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না। দিন দিন ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করে শিক্ষাকে বাণিজ্য হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষা আর বাণিজ্য একসাথে চলতে পারে না।’

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সদস্য রাকিবুল রনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ শুধুমাত্র ফরম বাণিজ্যর মাধ্যমে আয় করে। ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধির ফলে একজন ভর্তিচ্ছুকে শুধু জাবির ফরম পূরণ করতেই আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পক্ষে এই টাকা খরচ করা প্রায় অসম্ভব। পরীক্ষা শেষে শিক্ষকদের ভাগ–বাঁটোয়ারার ফলে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ওপর শোষণ যেমন বাড়ছে, তেমনি শিক্ষকদের ভোগ–বিলাসের মাত্রাও বেড়েছে কয়েকগুণ।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার আহ্বায়ক শাকিলুজ্জামান বিক্ষোভের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর ভর্তি ফরমের মূল্য অনৈতিকভাবে ৫০ টাকা হারে বৃদ্ধি করছে। গত আট বছরে ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি বাবদ আয়ের ৪০ শতাংশ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের জন্য তহবিলে রাখতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা না করে শুধু
২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষেই ভর্তি খরচ বাদে ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।’ তিনি এসময় ভর্তি বানিজ্য থেকে প্রশাসনকে বের হয়ে আসার আহ্বায়ন জানান।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়কে চুরি নয় বরং স্পষ্টত ডাকাতি আখ্যা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে এরা কোনো চোর নয়, এরা ডাকাত। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে দাম্ভিকতার সুরে। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, অযাচিত অর্থ আদায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’
তিনি প্রশাসনকে হুশিয়ারি করে আরো বলেন, ‘যদি ভর্তি ফরমের মূল্য কমানো না হয় তাহলে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে, কনজ কান্তি রায় প্রমুখ।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম (শিক্ষা) বলেন, ‘ভর্তি ফরমের মূল্য কমানোর বিষয়ে আমরা কোন চিন্তা করি নি। ইতিমধ্যে আমাদের ২ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে।’ গত বছরের ভর্তি ফরম বাবদ আয়ের টাকা ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সময় খরচ বাবদ অধিকাংশ টাকাই ব্যয় করা হয়েছে এবং বাকি টাকা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়েছে। ৯ কোটি টাকা শিক্ষকরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে এমন তথ্য ভুল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদনে ৬টি অনুষদ ও ৩টি ইনস্টিটিউটের অধীনে ১০টি ইউনিটে ভর্তির আবেদনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এ, বি, সি, ডি এবং ই ইউনিটের ভর্তির ফরমের মূল্য গত বছরের চেয়ে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সি১, এফ, জি, এইচ এবং আই ইউনিটের ফরমের মূল্যও ৫০ টাকা বৃদ্ধি করে ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লেখ, গতকাল ২১ আগষ্ট বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে মিছিল করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর