সিরাজগঞ্জে সোনালী আঁশের সুদিনের স্বপ্ন দেখছে কৃষক

সিরাজগঞ্জে সোনালী আঁশ সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে গ্রাম অঞ্চলে পাট থেকে আঁশ কাজে ব্যস্ত থাকেন কৃষকরা। গাছ পাট দীর্ঘদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে তা পঁচে যাওয়ার পর তা থেকে আঁশ পাট সংগ্রহ করে থাকেন কৃষকরা।

গত কয়েকদিনে জেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা,নারী-পুরুষ মিলে রাস্তার পাশে বসে কিংবা বাড়ির উঠোনে বসে সোনালী আঁশ সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সোনালী আঁশ পাট নিয়ে কৃষকের স্বপ্ন নতুন নয়। ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় প্রতিবছর পাট চাষ করেন কৃষক। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষার পানিতে খাল-বিল, ডোবা-নালা ভরে ওঠে । সোনালী স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ ঘরে তুলতে বেড়ে যায় কৃষক-কৃষাণীর ব্যস্ততা ।

প্রতি বছরের মতো চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে নতুন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা। এখন চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানো ও রোদে শুকানোর কাজ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডোবা ও বিলের পানির মধ্যে জাগ দেওয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন কৃষক। শুধু কৃষক নয় এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা থাকায় কৃষকদের সাথে প্রতিবেশিরাও আঁশ ছাড়িয়ে দিয়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,চলতি মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৬’শ ৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর আবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৯’শ ৫ হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে ২ হাজার ৭’শ ৯২ হেক্টর জমির পাট চলতি মৌসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাদে মোট পাট উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ১’শ ১৩ হেক্টর জমিতে। জেলার উৎপাদনকৃত উপজেলার মধ্যে কাজিপুর,সিরাজগঞ্জ সদর ও বেলকুচি উপজেলায় এ বছর সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ করা হয়েছে।

এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১ বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। আর ফলন ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ পাট পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে বাজারে নতুন পাট ওঠতে শুরু করেছে। দামও ভাল। জেলার প্রায় সব গুলো উপজেলার বিভিন্ন হাটে বিভিন্ন জাতের পাট বেচা-কেনা হচ্ছে। তোষা জাতের পাট ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১ শ’ টাকা আর মেস্তা জাতের পাট ২ হাজার ৩ শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাজিপুর উপজেলার কয়েকজন পাট ব্যবসায়ী জানান,এ বছর পাটের দাম বেশ ভাল । হয়তো কৃষক লাভের মুখ দেখতে পাবে। এদিকে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় রায়গঞ্জ উপজেলার বুলাকিপুর গ্রামের কৃষক রজব আলী এ বছর প্রায় ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন।

একই গ্রামের শরিফুল তিনিও ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। জানা যায়,এক সময় এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পাট চাষ করা হতো । পাট চাষীদের সুবিধার্থে সিরাজগঞ্জে কওমী জুট মিলের স্থাপন করা হয়। এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট ন্যায্য মূল্যে এ পাটক্রয় কেন্দ্রে বিক্রি করতো। এছাড়া এ অঞ্চলের উৎপাদিত পাট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জুটমিলে বিক্রয় হতো ।

কিন্তু বর্তমানে পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখানে পাট চাষ কমে গেছে। তারপরও এলাকার কৃষকরা সোনালী আঁশের সুদিনের আশায় প্রতি বছর কিছু জমিতে পাট চাষ করে আসছেন ।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুল হক জানান,বিগত বছর গুলোতে পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়াতে পাট চাষ কম হয়েছে। তবে পাট জাতীয় উপকরণ বৃদ্ধির সাথে সাথে পাট চাষের পরিমান বিগত বছরের তুলনায় বেড়েছে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে বাজারে নতুন পাটের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষক খুশি। আশা করা যায় আগামী মৌসুমে পাটের আবাদ আরও বাড়বে।

বার্তাবাজার/এস.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর