পানির অভাবে পাট নিয়ে সংকটে কৃষকরা

পানির অভাবে পাট জাগ দেয়া নিয়ে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা সংকটে পড়েছে।পানির অভাবে এ উপজেলার কৃষকদের প্রধান ফসল সোনালী আঁশ এখন যেন কালো আঁশে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, ১৩৬ বর্গ কিলোমিটারের এ উপজেলায় চলতি বছরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৬ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে।কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৬ হাজার ২শত ৫৫ হেক্টর জমিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর আলফাডাঙ্গাতে বৃষ্টি কম হওয়ায় জলাশয়গুলোতে পানি বেশি না থাকায় উপজেলার আলফাডাঙ্গা,গোপালপুর, টগরবন্ধ,বুড়াইচ,বানা ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের খাল, বিল ও ডোবায় তলানী পর্যন্ত শুকনো হয়ে আছে। ফলে এখন কাটা পাট জাগ দিতে না পেরে মহা বিপাকে আছে হাজার হাজার কৃষকেরা।বাধ্য হয়ে অনেক এলাকার কৃষক এখন শ্যালো মেশিন দিয়ে পুকুর কিংবা ডোবায় পানি দিয়ে কোনো রকমে পাট জাগ দিচ্ছেন।

সদর ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের এক কৃষক বার্তা বাজারকে বলেন, ১বিঘা জমির পাট শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে জাগ দিতে ১হাজার থেকে ১২শ’ টাকা খরচ হচ্ছে।

সরেজমিনে গোটা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রখর রোদে কৃষকরা পানিশুন্য নিচু জমিতে কোনো রকমে সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করে পাট জাগ দিয়েছেন, কেউ কেউ পাট জাগের ব্যবস্থা করছেন, কেউবা পুকুর সংলগ্ন জমিতে পানির ব্যবস্থা করে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দিচ্ছেন আবার অনেক কৃষকই পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারায় পাট শুকিয়ে পাটকাঠিতে পরিণত হওয়ার চিত্রও চোখে পড়েছে।

আরও দেখা যায়, যেসকল কৃষকরা ইতোমধ্যে পাট জাগ দিয়েছেন তাদের সবাই সনাতন পদ্ধতিতে জাগ দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে পুকুর নালা ডোবা কিংবা পুকুর সংলগ্ন জমির পরিবেশ দুগর্ন্ধ ও বিষাক্ত হয়ে যাওয়ায় পুকুর, নালা, ডোবা ও নিচু জমির দেশিয় প্রজাতির মাছ মারা যাচ্ছে।

অনেক কৃষক আবার নিরুপায় হয়ে ৮/১০ কিঃ মিঃ দূরে ভ্যান, নসিমন কিংবা গাড়িযোগে মরা বারাশিয়া নদীতে নিয়ে পাটের জাগ দিচ্ছে। ফলে বারাশিয়া নদীর পানি এখন পঁচে কালো রং ধারন করেছে।

একজন পাট কাটা শ্রমিকের মজুরী প্রতিদিন ৬/৭শত টাকা। বাজারে প্রতি মণ পাট ২হাজার থেকে ২২শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এই মূল্যে পাট বিক্রি করায় খরচের টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলো এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছে।গত বছর কোটি কোটি টাকার পাট বাকীতে ক্রয় করলেও এখনো ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ না করায় ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয়ের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে।ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয় না করায় পাটের ভরা মৌসুমেও কম দামে পাট বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপদ প্রসাদ সাহা বার্তা বাজারকে জানান “শুধুমাত্র পাট জাগ দেয়া সমস্যার কারণে এ বছর পাটের আবাদ কম হয়েছে।রিবন রেটিং পদ্ধতি আমাদের উপজেলায় তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি, কারণ নির্ধারিত সময়ের একদিন পরেও যদি পাট জাগ দেওয়া হয় তাহলে পাটের আঁশ সঠিকভাবে ছাড়িয়ে নেওয়া যায় না।এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।আবার সনাতন পদ্ধতিতেও পাট জাগ দেওয়ায় পরিবেশ দূষিত হয়।”

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর