তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে যা বললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, দু’দেশের জন্য স্বার্থরক্ষা হয় এমনটা বিবেচনায় নিয়ে অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে একটি ফর্মুলা খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ-ভারত রাজি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়েও কথা বলেন জয়শঙ্কর। দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের একটি প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এর কোনো পরিবর্তন হয়নি।’

তিস্তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজে ভারতের সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেন, সবার সুবিধার কথা ভেবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেবে ভারত। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ভারত সব সময় সমর্থন দিয়ে আসছে। এ জন্য ভারত সম্ভাব্য সব ধরনের মানবিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে রাখাইনে ভারত ২৫০টি বাড়ি হস্তান্তর করেছে।

আসামের নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) হলে ওই তালিকায় থেকে বাদ পড়া লোকজনকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটি একান্তভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরে আমরা উৎফুল্ল।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বহু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এর আগে সকালে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করবেন তিনি।

সোমবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ড. এস জয়শঙ্কর। রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছেন।

জয়শঙ্কর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনার সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি এ সফরে নির্ধারণ করা হতে পারে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ইতিপূর্বে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব থাকাকালে বাংলাদেশ সফর করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির আলোকে জয়শঙ্কর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সফর করেছেন ভুটান।

এবার বাংলাদেশ সফর করছেন। মোদির ঘনিষ্ঠ ও অনুগত হিসেবে পরিচিত জয়শঙ্কর দেশটির বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী।

তার সফরকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ অভিন্ন নদীর পানির ভাগাভাগি, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভারতের সহযোগিতা, ভারতের ঋণের বিষয়সহ সার্বিক দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা হবে।

ভারতের বিজেপি সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম ঢাকা সফর। বুধবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।

বার্তাবাজার/আ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর