নকলায় অবাধে চলছে বক নিধন: ইউএনওর হস্থক্ষেপে অবমুক্ত

শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে চলছে অবাধে বক নিধন। সম্প্রতি বন্যায় ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেসে আসে মাছসহ অনেক জলজ ছোট প্রাণি। বন্যার পানি নেমে গেলেও কিছু মাছ ও ছোট জলজ প্রাণি খেতে আটকা পড়ে। ভাসা পানিতে খাদ্যের অভাবে থাকা বক খাদ্যের সন্ধানে ওইসব ফসলি মাঠে দল বেধে নামতে থাকে। তা দেখে কিছু অসাধু লোক বিশেষ কৌশলে বক শিকার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাচাঁর তাগিদে বকগুলো খাদ্যের সন্ধানে এসে নিজেই লোভী মানুষের খাদ্যে পরিণত হচ্ছে।

ফেরুষা, গড়েরগাঁও, উরফা, জালালপুর, চন্দ্রকোণা, বানেশ্বরদী, টালকী, পাঠাকাটা, চরঅষ্টধর, গৌড়দ্বার, গনপদ্দী, বাড়ইকান্দি ও ডাকাতিয়া কান্দার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমিতে সকালে কলা গাছ ও চাও গাছের পাতা দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরী করা ঘরের ভিতরে বসে নিজের পালিত বক উড়িয়ে মুক্ত বক গুলোকে আকৃষ্ট করা হয়। বক এসে ওই ঘরের উপরে বসতেই ভিতর থেকে ওই বন্য বকের পা টেনেধরে শিকার করা হয়। তাছাড়া বিষটোপ, চিকন প্লাস্টিকের সুতার মাধ্যমে তৈরী ফাঁদ এবং ছোট মাছ বা ব্যাঙ বড়শিতে গেঁথে অবাধে বক শিকার করা হচ্ছে।

এমন সংবাদের ভিত্তিতে, মঙ্গলবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান ফেরুষা এলাকায় ও গড়েরগাঁও মোড় বাজারে অভিযান চালিয়ে এগারটি শিকার করা বকসহ আরো কিছু পালিত বক অবমুক্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান জানান, গড়েরগাঁও মোড়ে বিক্রির জন্য আনা বকগুলো শিকারিসহ আটক করা হয়। পরে অন্যান্য শিকারিদের বাড়িতে গিয়ে বক ধরার সরঞ্জামাদি ধ্বংস করাসহ যেসব পালিত বক দিয়ে বন্য বক শিকার করা হত, সেসব বক উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে আর বক শিকার করবে না মর্মে অঙ্গীকারের শর্তে বক শিকারিদের মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্য প্রাণি সংরক্ষণে সর্বসাধারনকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানানো হয়। ইউএনও বলেন, বন্য প্রাণি ক্রয়-বিক্রয় উভয়ই অপরাধ। তাই বক বিক্রেতাসহ ক্রেতাদেরকে নিয়ে সচেতনা মূলক পথ আলোচনা সভা করা হয়। আলোচনায় বন্য প্রাণি নিধনে অপরাধ বিষয়ে সকলকে সচেতন করা হয়।

জানা যায়, ফেরুষা এলাকার বক শিকারি জাহাঙ্গীর, আলমগীর ও ঝাডু এবং বাড়ইকান্দির আশরাফ, ছামিদুল, টুক্কা, তালেব, লালমিয়া, ফকিরসহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু বক শিকারি নিয়মিত বক শিকার করেন। শিকারিরা প্রতি জনে দৈনিক ৫ থেকে ১০ টি বক শিকার করতে পারেন। অনেক শিকারি জানায়, এখন প্রতিটি বক ৯০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তবে শীত মৌসুমে তারা বক বেশি শিকার করতে পারেন। তখন দামও বেশি থাকে। আফজাল, তালহা, ওসমান, লিটনসহ বেশ কয়েকজন বক ক্রেতা জানান, তারা বক ছেড়ে দিতে এবং আর শিকার না করতে শিকারিদের অনেক বুঝিয়েছেন। কিন্তু কোন ক্রমেই তারা মানতে নারাজ। আরো বলেন, তারা না কিনলেও বক গুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করা হবে; তাই তারা কিনে নিচ্ছেন।

এবিষয়ে নকলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুর রহমান জানান, অসময়ে বক শিকার করা হচ্ছে এমন তথ্য আগে জানা ছিলনা। তবে এখন থেকে নজরধারি করা হবে। তিনি বলেন, শুধু বক নহে, নিষিদ্ধ যেকোন পশু-পাখি কোন ক্রমেই যেন শিকারে পরিণত না হয়, সে দিকে কড়া নজরধারি রাখা হবে। তিনি জানান, নিষিদ্ধ পশু-পাখি শিকার করা পরিবেশ ও প্রাণিবৈচিত্র ধ্বংসের আলামত। তাই নিষিদ্ধ বন্য পশু-পাখি শিকার করা ও ক্রয় করা আইত অপরাধ। নিষিদ্ধ পশু পাখি শিকারি সে যেই-ই হোক না কেন তাকে কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা।

নকলা থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন শাহ জানান, নিষিদ্ধ বন্য পশু-পাখি শিকার ও ক্রয় বন্ধে পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় তৎপরতা বাড়াবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস জানান, বন্য পাখি নিধনের ফলে ফসলি জমিতে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে বাড়ছে বিভিন্ন মরন ব্যাধি। তাই পাখি নিধন বন্ধ করা জরুরি।

বার্তাবাজার/আ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর