নীরবে রক্ত দিয়ে মানবসেবা করে যাচ্ছে-আশিক আহমেদ

সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ক’দিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ছিলো সারিবদ্ধ লাইন। কোনও সোরগোল নেই। ছিল শুধু নীরবতা। সেই নীরবে মশাড়ি টাঙ্গিয়ে শুয়ে ছিলো রক্ত না পাওয়া এক অবহেলিত রিক্সাচালক । হঠাৎ পাশে যেতে না যেতেই কানে ভেঁসে ওঠে রক্ত না পাওয়া কন্ঠস্বর।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রক্ত লাগবে কার এমন জিজ্ঞাসায় পরিচিত কন্ঠ। ঠিক তখনই সবার এক যোগে চিৎকার ঐ যে উনার। এ রকম অবহেলিত মানুষদের রক্ত দিয়ে মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা এ যেন আর্ত-মানবতার স্বার্থকতা।

জীবনের উদ্দেশ্য শুধু নিজেকে সুখী করা নয় বরং উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অন্যেকে সুখী করা। কথায় আছে পৃথিবীতে দান করে কিংবা মানবসেবা করে কেউ কখনো গরীব হয়নি,বরং গরীব মানসিকতার মানুষরাই কখনো কারো জন্য কিছু করতে পারেনি।

পৃথিবীতে সেই মানুষগুলোই সবচেয়ে সুখের কাছাকাছি যেতে পেরেছে,যারা নিজেদেরকে আর্ত-মানবতার সেবায় বিলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। নিজের জন্য নয় সমাজ ও মানুষের সেবা করার মাঝেই যেন এমন আনন্দ খুজে পান সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি,পৌর এলাকার মৃত সাইদুল ইসলামের ছেলে আশিক আহমেদ। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরর্ত রয়েছেন।

মেধাবী এই ছাত্রনেতা রাজনীতিকে পেশা হিসেবে না নিয়ে নিয়েছিল সমাজ সেবা হিসেবে।রাজনীতিতে প্রবেশের পর থেকেই মাদক বিরোধী অবস্থান,বাল্য বিবাহ রোধ,দুস্থ্যদের পাশে দাঁড়ানো ছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান। এসব কিছুই যেন তার নেশা।

তিনি কর্মজীবনে শত ব্যস্ততা থাকা শর্তেও সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমেও ঢাকাসহ সিরাজগঞ্জে মূমুর্ষ রোগীদের জরুরী রক্তের চাহিদা পূরণে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংকার আশিক আহমেদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,রক্তদান হচ্ছে সবচেয়ে বড় একটি মানবসেবা। এটা একটা এবাদত। একজন মুর্মূর্ষ রোগীকে রক্তদান করে প্রাণে বাঁচানোর ঋণ শোধ করা যায় না। আমি ইতিমধ্যে ৩২ ব্যাগ রক্ত ডোনেট করেছি এবং প্রায় ১ হাজার ৬’শ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে। সেই সুবাধে ইতিমধ্যে কয়েকটি সংস্থা থেকে সম্মাননা পদকও পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন,প্রতিনিয়ত রক্তের অভাবে ঝরে যায় হাজারো প্রাণ। কিন্তু সামাজিকভাবে বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। এর কারন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা রক্তদান সম্পর্কে সচেতন নই,রক্তদানের কথা শুনলে আমরা ভয় পাই। কিন্তু আমরা যদি রক্তদান সম্পর্কে জানতে পারি,নিজেকে সচেতন করতে পারি ও মানবসেবায় নিজেকে উজ্জিবিত করতে পারি তাহলেই এটা জয় করা সম্ভব।

কারন ১৮-৫০ বছরের সকল নারী পুরুষ শারীরিকভাবে সুস্থ্য থাকলে ৯০ দিন পর পর এক ব্যাগ রক্ত দান করতে পারে। রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি ও রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমি স্বেচ্ছায় রক্তদান করি।

যদিও বাংলাদেশে শতভাগ রক্তের চাহিদা পূরণের স্বপ্ন নিয়ে বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে বেশ কিছু সংগঠন এগিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে শহরের জাহান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো.একরামুল হাবীব (পিয়াস) বলেন,আশিক বাল্যকাল থেকেই আর্ত-মানবতার সেবায় কাজ করতো। সেটা তার কর্মজীবনে ও চলমান রেখেছে। আসলে প্রত্যকেরই উচিৎ নিজেদের কাজের দ্বারা সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া।

তাছাড়া সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সকলের মাঝে সম্প্রীতি সেতুবন্ধন তৈরিতে প্রত্যেকের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সকলের উচিত মানুষকে ভালবাসা ও আর্ত-মানবতার সেবায় উজ্জীবিত হয়ে মানবতার কল্যানে ব্রতি হওয়া।

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর