সবাই যখন সেলফিতে ব্যস্ত, মেয়েটি এসেছিল পানি-বিস্কুট নিয়ে!

রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ২০ জন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে আগুন লাগার ৬ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া ২৫ জনের মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় উদ্ধার অভিযানের মাঝে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল উৎসুক জনতা। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ পথ আটকে অকারণে দাঁড়িয়ে আছে আর মোবাইল বের করে ছবি তুলছে!

তাদের ভিড়ের কারণে অ্যাম্বুলেন্স, দমকলের গাড়ি ঠিক সময়মতো যাতায়াত করতে পারছে না। এতসব বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের মাঝে ব্যতিক্রমী মানুষও ছিল। এ সময় উৎসুক জনতাদের কাছে করুণভাবে আকুতি করতে শোনা গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।

তারা বলছিলেন, ‘ভাই সরেন, জায়গা দেন, আল্লাহর দোহাই লাগে,গাড়ি যাইতে দেন। আগুনে আটকে পড়া মানুষগুলারে বাঁচাতে দেন।’

গতকালের এই আগুনে উদ্ধার অভিযানে প্রশিক্ষিত বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল একেবারে সাধারণ মানুষ। তারা যেভাবে পেরেছে সহায়তা করেছে। যেমন এই মেয়েটি। তার পরিচয় জানা এখনও সম্ভব হয়নি। তিনি এসেছিলেন ব্যাগভর্তি পানি আর বিস্কুট নিয়ে!

উদ্ধারকারীরা যখন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত; তখন তাদের প্রাণ রক্ষায় পানি আর বিস্কুট বিতরণ করেন এই তরুণী‍! জীবন-মৃত্যুর খেলার মাঝেও উদ্ধারকারীদের মন ছুঁয়ে যায় এই ঘটনা।

উদ্ধারকারীদের একজন আরেফিন মাহমুদুল হাসান সোশ্যাল সাইটে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, আমরা বনানীতে যখন দমকল বাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করছিলাম, অ্যাম্বুলেন্স গুলোকে চলাচলের জন্য রাস্তা করে দিচ্ছিলাম তখন দেখলাম মেয়েটা আমাদের মাঝে এসে পানি-বিস্কিট বিলি করছে। আমার কাছে এসে যখন একটা পানির বোতল ধরিয়ে দিল তখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে আপা এসব কেন দিচ্ছেন? তখন তিনি বললেন, ‘আপনারা তো খালি পেটে আছেন, কিছু না খেলে এনার্জি পাবেন না।’

এদিকে এফ আর টাওয়ারে নিহতদের নাম পরিচয়ের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে-

১. মো. মনির হোসেন সর্দার (৫২), বাবা- মৃত মোতাহার হোসেন সর্দার, গ্রাম- উত্তর কড়াপুর (সর্দারবাড়ি), থানা-বিমানবন্দর, জেলা-বরিশাল। বর্তমান ঠিকানা-৬৮৫/২ মোল্লার রোড, পূর্ব মনিপুর, মিরপুর, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ইউনাইটেড হাসপাতালে।

২. সৈয়দা আমিনা ইয়াসমিন (৪৮), বাবা সৈয়দ মহিউদ্দিন আহমেদ, গ্রাম-রামপাশা, পো- কেরামতনগর, থানা- কোমলগঞ্জ, জেলা-মৌলভীবাজার। বর্তমান ঠিকানা- ২০৬/ কাফরুল, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল অ্যাপোলো হাসপাতালে।

৩. মো. আবদুল্লাদ আল মামুন (৪০), বাবা-মৃত আলহাজ আবুল কাশেম, গ্রাম- বালুয়াডাঙ্গা, কোতোয়ালি, দিনাজপুর। বর্তমান ঠিকানা- বাবা-১৫/৬/২, রোড-১, কল্যাণপুর, মিরপুর, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ইউনাইটেড হাসপাতালে।

৪. মো. মাকসুদুর রহমান (৩২), বাবা-মৃত মিজানুর রহমান। বর্তমান ঠিকানা-১১ নং আলমগঞ্জ, থানা-গেন্ডারিয়া, জেলা-ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ইউনাইটেড হাসপাতালে।

৫. মো. মিজানুর রহমান, গ্রাম-কোদলা, থানা-তেরখাদা, জেলা-খুলনা। বর্তমান ঠিকানা- হেরিটেজ এয়ার এক্সপ্রেস, এফ আর টাওয়ার (১০ তলা), রোড-১৭, বনানী, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল সিএমএইচ হাসপাতালে।

৬. মো. মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), বাবা- মৃত আব্দু রশিদ মুন্সি, গ্রাম-চতরা, থানা-পীরগঞ্জ, জেলা- রংপুর। বর্তমান ঠিকানা-বাসা-২/এ/২/১৬, মিরপুর-২, থানা মিরপুর, ঢাকা। সিএমএইচ হাসপাতালে লাশ রাখা ছিল।

৭. ফ্লোরিডা খানম পলি (৪৫), স্বামী- ইউসুফ ওসমান, বাবা- আফজাল হোসেন, বাসা নং-২, রোড নং-৪, রূপনগর হাউজিং, থানা-রূপনগর, ঢাকা। সিএমএইচ হাসপাতালে লাশ রাখা ছিল।

৮. আতাউর রহমান (৬২), বাবা- মৃত হাবিবুর রহমান, বাসা-১৭/২, তাজমহল রোড, ব্লক-সি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল সিএমএইচ হাসপাতালে।

৯. মো. রেজাউল করিম (৪০), পিতা-নাজমুল হাসান, মাতা-তহুরা বেগম, গ্রাম-দক্ষিণ নাগদা, থানা- তমলব (দক্ষিণ) জেলা-চাঁদপুর। বর্তমান ঠিকানাঃ বাড়ি নং-১৬, রোড -২৩, ফ্ল্যাট বি/টু, বনানী। কুর্মিটোলা হাসপাতালে লাশ ছিল।

১০. জেবুন্নেছা (৩০)। বাবা- আবদুল ওয়াহাব, মা-কামরুন্নাহার, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। বর্তবান ঠিকানাঃ ৬৬/৩, পশ্চিম রাজাবাজার, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল কুর্মিটোলা হাসপাতাল।

১১. আহাম্মেদ জাফর (৫৯)। বাবা- হাজি হেলাল উদ্দিন (মৃত), মা-আলভি বেগম। নবীনগর, সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

১২. মো. সালাউদ্দিন মিঠু (২৫)- পিতা: মো. সামসুদ্দিন, মাতা: মাকছুদা বেগম, বাসা নং: ৩৪৯, মধুবাগ মগবাজার, রমনা, ঢাকা। বিনা ময়নাতদন্তে নিহতের বাবাকে কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর।

১৩. নাহিদুল ইসলাম তুষার (৩৫)- পিতা: মো. ইছাহাক আলী, মাতা: নুরুন্নাহার, সাং- ভানুয়াবহ, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল। মো. আবুল হোসেন নিহতের চাচা। তার কাছে বিনা ময়নাতদন্তে কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর।

১৪. তানজিলা মৌলি (২৫)- স্বামী: রায়হানুল ইসলাম, পিতা: মো. মাসুদার রহমান। সাং: সান্তাহার বলিপুর, আদমদিঘী, বগুড়া। বর্তমান ঠিকানা: মিতালী হাউজিং, দক্ষিণ কাফরুল, বাড়ি-ই/৩, কাফরুল, ঢাকা। কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর।

১৫. মো. মঞ্জুর হাসান (৪৯), বাবা-মনসুর রহমান (মৃত), মা-মিসেস রোকেয়া বেগম, বোয়ালিয়া, নওগাঁ। বর্তমান ঠিকানাঃ ২৬২/২, ছাপড়া মসজিদ, ইব্রাহিম পুর, কাপরুল ঢাকা, লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

১৬. হীরস (৩৫)- বিগনাবাজার, শ্রীলঙ্কা। বর্তমান ঠিকানা- বাসা নং-৭৬, রোড- ১৮, ব্লক-এ, বনানী, ঢাকা। ঢাকা মেডিক্যাল থেকে লাশ হস্তান্তর।

১৭. মো. ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), বাবা-ইসহাক আলী, বানিয়াপাড়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। বর্তমান ঠিকানাঃ সিনিয়র হিসাব রক্ষক ফ্লোগাল, এফ আর টাওয়ার বনানী, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

১৮. শেখ জারিন তাসনিম বৃষ্টি (২৫), বাবা- শেখ মোজাহিদুল ইসলাম, মা-নীনা ইসলাম, ৭৪, বেজপাড়া, মেনরোড, যশোর। বর্তমান ঠিকানাঃ খিলক্ষেত বটতলা, খিলক্ষেত, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

১৯. মো. ফজলে রাব্বি (৩০), বাবা- মো. জহিরুল হক, মা-শাহানাজ বেগম, উত্তর ভূঁইগড়, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

২০. আতিকুর রহমান (৪২), বাবা-আবদুল কাদির মির্জা (মৃত), মা-হাজেরা বেগম, পূর্ব সারেন গাঁ, শৈলপাড়া, পালং, শরীয়তপুর। বর্তমান ঠিকানাঃ আমতলী, মানিকদী ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

২১. আনজির সিদ্দিক আবির (২৭), বাবা- আবু বক্কর সিদ্দিক, কলেজ রোর্ড, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট। বর্তমান ঠিকানাঃ পাইকপাড়া, মিরপুর, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

২২. আব্দুল্লাহ আল ফরুক (৬২), বাবা-মকবুল আহমেদ, পূর্ব বগাইব, ডেমরা, ঢাকা। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

২৩. রুমকি আক্তার (৩০), স্বামী-মাকসুদুর রহমান, বিল্লালাড়, জলঢাকা, নীলফামারী। লাশ রাখা ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

২৪. মো. পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬)- পিতা: মৃত নজরুল ইসলাম মৃধা, মাতা: নাছিমা বেগম, সাং-বালুগ্রাম, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ। কুর্মিটোলা থেকে লাশ হস্তান্তর।

২৫. মো. আমির হোসেন রাব্বি (২৯)- পিতা: আউয়ুব আলী, মাতা: রত্না খাতুন, সাং- গাঙ্গাহাটি, (চরপাড়া), আতাইকুলা, পাবনা। বর্তমান ঠিকানা: বাসা নং- ২৩, রোড-৯, ব্লক-এ, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা। ঢাকা মেডিক্যার কলেজ হাসপাতাল।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ২১-তলা বনানীর এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারের কাজ করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর