খুশি পাকিস্তান, নাখোশ ভারত

পাকিস্তান ও চীনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের সাম্প্রতিক সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার রাতে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করতে পারায় ভীষণ খুশি পাকিস্তান। তারা একে নিজেদের কূটনৈতিক বিজয় হিসাবেই দেখছে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি বলেছেন, কাশ্মীর যে একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু, নিরাপত্তা পরিষদের এই বৈঠকই তার প্রমাণ। ভারত বরাবরই কাশ্মীর সঙ্কটকে নিজেদের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

গত ৫ আগস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ হঠাৎ করেই রাজ্যসভায় কাশ্মীরকে গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়। তারমধ্যে একটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং অপরটি লাদাখ।

এর আগের দিন রাতেই গোটা উপত্যকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় সেকানকার ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে। শুধু তাই নয়, গোটা রাজ্যের টেলিফোন ও ইন্টারনেটসহ সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন করা হয়। এ অবস্থায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে এই বেঠকের আবেদন জানায় পাকিস্তান ও চীন।

নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা কক্ষে শুক্রবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে শুরু হয় বৈঠকটি। গত ৫০ বছর পর জাতিসংঘ এ ধনের বৈঠকের আয়োজন করলো। এর আগে ১৯৭২ সালে শিমলা চুক্তির সময়ে শেষ বারের মতো কাশ্মীর উপত্যকা উঠে এসেছিল জাতিসংঘের টেবিলে।

শুক্রবারের ওই বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। তবে এতে নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। জাতিসংঘের এই বৈঠকটি যেহেতু আনুষ্ঠানিক নয়, তাই এর কোনো ফলাফল ঘোষণা করা হবে না।

স্বাভাবিকভাবেই এই বৈঠককে নিজেদের সফলতা হিসেবেই দেখছে পাকিস্তান। এজন্য নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে পাকিস্তানের পাকি পররাষ্টমন্ত্রী কুরেশি বলেন, এই বৈঠক প্রমাণ করে কাশ্মীর ভারতের কোনো আভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু।

জাতিসংঘ নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালিহা লোধি বলেছেন, এ বৈঠক প্রমাণ করেছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনগণের চিৎকার-ধ্বণি জাতিসংঘের কানে পৌঁছেছে। তিনি আরো দাবি করেন, নিরাপত্তা পরিষদ সব সদস্য দেশ আরেকবার জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে এই পরিষদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কাশ্মীরের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগের প্রকাশ করে কাশ্মীর পরিস্থিতিকে ভয়াবহ ও বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন চীনা প্রতিনিধি। একই সঙ্গে চীনা কূটনীতিক নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন, ভারত সরকারের এমন ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত ‘বৈধ নয়’।

তবে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, চীন ও পাকিস্তান ছাড়া আর কোনো দেশ নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংক্রান্ত পদক্ষেপের বিরোধিতা করেনি।

এই বৈঠক নিয়ে যারপর নাই বিরক্ত ভারত। বৈঠক শেষ হওয়ার পর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন বরাবরের মতই বলেছেন, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েকোনো আলোচনা গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রসঙ্গত, ভারত সরকার কয়েক দশক ধরে নিজের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে। কাশ্মীরের জনগণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত কাশ্মীরর সংক্রান্ত প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চান, যেখানে এই অঞ্চলের ভবিষ্যত নির্ধারণের বিষয়টি সেখানকার জনগণের মধ্যে গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে মীমাংসা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু নিজেদের স্বার্থেই নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাব মেনে নিতে চায় না ভারত সরকার।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর