কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের রুদ্ধদ্বার বৈঠক আজ

কাশ্মীর ইস্যুতে আজ শুক্রবার সকালে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির অনুরোধে এই বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ।

নিরাপত্তা পরিষদের এক গোপন সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার হবে না এবং কোনো সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকেও বৈঠক চলাকালীন ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়ায় হবে না। চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকটির বিষয়ে।

বর্তমানে ইউএনএসসির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে পোল্যান্ড। ১৫ সদস্যের অংশগ্রহণে পোল্যান্ড ওই বৈঠক পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সংকটপূর্ণ কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তবায়ন কার্যত সম্ভব নয়। মনে করা হচ্ছে, শুক্রবারের বৈঠকে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবশালী দুই সদস্য চীন পাকিস্তানকে এবং যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সমর্থন জানাবে।

তবে কাশ্মীর সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠকে রাজি করানোর বিষয়টিকে নিজেদের কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখছে পাকিস্তান।

এর আগে গত মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদ বরাবর লেখা এক চিঠিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরাইশি ভারতের অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়ে বৈঠকে বসার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। বুধবার পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে চীন-ও ইউএনএসসিকে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার কাশ্মীর নিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানায়।

এরপর গত বুধবার পোল্যান্ডের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট জোয়ানা রোনেক্কার কার্যালয়ে এই ইস্যুটি নিয়ে বৈঠক করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে শুক্রবার এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ।

এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতারেস জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানকে কোনো ধরনের সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১৪৪ ধারা জারি ও জনজীবনে কড়াকড়ি আরোপের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এ নিয়ে অনেকটা একই রকম মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে কাশ্মীর সঙ্কট নিয়ে বিশ্বনেতাদের এই নিস্পৃহ ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার অভিযোগ, বিশ্ববাসীর এই নীরবতার কারণে কাশ্মীরে আরেকটি মুসলিম নিধনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে, গত শতাব্দীর নব্বই দশকের গোড়াতে যেমনটি হয়েছিল বসনিয়ার সাব্রেনিকা এলাকায়।

প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্র শাসিত রাজ্য ঘোষণা করে মোদি সরকার। এর আগের রাতেই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। মোতায়েন করা হয় ৮ লাখের বেশি ভারতীয় সেনা। বন্ধ করে দেয়া হয় সমস্ত স্কুল কলেজ। মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট সার্ভিসসহ সব ধরনের টেলিযোগাযোগও বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার।

কাশ্মীরের দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাহসহ ৫ শতাধিক রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। বাদ যায়নি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এমনকি শিক্ষকরাও। নিরাপত্তা কড়াকড়ির কারণে বন্ধ রয়েছে ওই রাজ্যের পত্র-পত্রিকাগুলোও। ফলে গত ১২ দিন ধরে কাশ্মীরের সঙ্গে পুরো পৃথিবীর যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর