বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনাকারীদের খুঁজতে তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং নায়কদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। এটা একটু সময় লাগছে। সেই তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করব এবং প্রয়োজনে তাদেরও বিচার করা হবে।’

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধূর একটি শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানবতার শত্রু প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্রের হাতে বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের মহানায়ক, বিশ্বের লাঞ্ছিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, এটা মুষ্টিমেয় দৃশ্যমান ব্যক্তিগুলো যারা ছিল। এর পেছনে একটি বৃহৎ শক্তি ছিল। এখানে পাকিস্তানে বিশ্বাসী আমলারা ছিল, সেনাবাহিনীর বিরাট একটি অংশ ছিল, ব্যবসায়ীরা ছিল। এরা বঙ্গবন্ধুর অর্জন স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। তারাই প্রতিশোধ নিয়েছে। এই বিচার কিন্তু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আসার পর ১৯৯৬ সালে আইনী প্রক্রিয়ায় যাতে বিচার হয়, সেটা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপক্ষিতে বিচার শুরু করেছিলেন।’

‘সেটা মুষ্টিমেয় কিছু। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা আছে। কারণ এই কয়েকজন এতো বড় নেতাকে হত্যা করতে পারে না। বিশ্বের এমন নন্দিত নেতাকে যিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন, সেই নেতাকে মুষ্টিমেয় কয়েকজন হত্যা করতে পারে না। এরা সামনে ছিল, পেছনে যারা; এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা এবং নায়ক ছিল, তাদের ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা আছে। একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে। একটু সময় লাগছে। সেই তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করর। প্রয়োজনে তাদেরও বিচার করা হবে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচনের জন্যই এই কমিশন গঠন করে বাকিদের বিচার করা হবে বলেন শেখ সেলিম।

শেখ সেলিম বলেন, ‘ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য, এটা বাঙালি জাতির জন্য জানার সুযোগ থাকবে, এই এই অপরাধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা যা অর্জন হয়েছিল, সব হত্যা করেছিল। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের চিন্তাভাবনা একটা তদন্ত কমিশন গঠন করা হবে এবং এর নেপথ্যের নায়কদেরও খুজে বের করার চেষ্টা করছি। ইনশাল্লাহ, সেটা আমরা করতে পারব।’

শেখ সেলিম বলেন, ‘যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন কষ্ট ভোগ করল, নির্যাতন সহ্য করল, সেই বাঙালিরাই, বাঙালিদের একটা অংশ হত্যা করল। পাকিস্তানিরাও কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে সাহস পায় নাই। তিনি যাদের জন্য করল, তারাই তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করল। শুধু একা না, একটি পরিবারের ১৮ জনকে হত্যা করল।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনি মোশতাক, জিয়া যেন এর বিচার না হয় সেই ব্যবস্থা করল। পৃথিবীর কোথাও নাই হত্যাকারীদের বিচার হয় না। মোশতাক-জিয়া ইনডেমনিটি দিল নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য। কারণ তারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল।

সুতরাং একাত্তরের পরাজিত শক্তি, আন্তর্জাতিক চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একে একে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছিল তাদের জিয়াউর রহমান ক্ষমা ঘোষণা করল ডিসেম্বর মাসে ক্ষমতা দখলের কয়েক দিন পরেই। জিয়াউর রহমান এই বিচারের ট্রাইব্যুনালকে ভেঙে দিল এবং তাদেরকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠত করল বলেও উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা শেখ সেলিম।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০ দশটার পর টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। শেখ হাসিনা সমাধির গেটে পৌঁছালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ স্বাগত জানান। কমপ্লেক্সর ভেতরে স্বাগত জানান শেখ হেলাল উদ্দিন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী সমাধি কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সশস্ত্র বাহিনীর এক চৌকস দল গার্ড অব অনার দেয় এবং করুণ সুরে বিউগল বেজে ওঠে। এরপর প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর একে একে স্পিকার ডা. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর