জীবন বাঁচাতে ১৭তলাতে এসির আউটডোর বক্সের উপর ৪জন!

ভিতরে আগুনে পুড়ে মরার পরিস্থিতি বাহিরে বাঁচার অনিশ্চয়তা তার পরও নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৭তলা ভবনের উত্তর পাশে বাহিরের দিকে রাখা এসির আউটডোর বক্সের উপর অবস্থান নিয়েছিল চারজন। এ দৃশ্যটি দেখেছেন বনানী এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর যারা সেখানে অবস্থান করেছেন সকলেই।

কোন কারণে সেখান থেকে পড়লে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও বাধ্য হয়ে তারা সেখানে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের সেখানে অবস্থান নেয়া দেখে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের দৃষ্টি ছিলো তাদের দিকে। তারা যখন ইন্টারনেটেরতার ধরে অন্যত্র সরে যাবার চেষ্টা করছিল তখন নিচের মানুষ গুলো আতংকে চিৎকার করছিল। নিচ থেকে সবাই তাদের নিষেধ করছিল নড়াচড়া না করার জন্য। তবে এত ওপরে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোর বাধানিষেধের কথা কোন ভাবেই পৌঁছানোর কথা নয়। তবে হাতের ইশারায় তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন নিচের মানুষ গুলো কি বলছে তাদের।

যারা সেখানে অবস্থান করছিল তাদের চোখের সামনেই দুজন ওপর থেকে পড়ে মারা যায়। সে দৃশ্যও তারা দেখেছেন সেখানেই বসে। তখন তাদের মনের পরিস্থিতি কি হয়েছিল তা শুধু তারাই বলতে পারবেন!

আগুনের ভয়াবহতা আর আর ধোয়ার কারণে ঘন্টা খানেক সেখানে অবস্থান করে কোন প্রকার সাহায্যে না পেয়ে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপদজ্জনক ইন্টারনেট তার ধরেই একজন বাদে অন্যরা পাশের ভবনের আশ্রয় নিয়েছিল। তারা যখন অন্য ভবনের দিকে সরে যাচ্ছিলেন সে সময় নিচে দাঁড়িয়ে সে দৃশ্য দেখে নিজের হাত পা শিরশির করে উঠেছে। যখন প্রতিবেদনটি লিখছি তখন টাইপ করতে গিয়েও বার বার হাত মুছে নিতে হচ্ছে। কারণ হাতের তালু ঘেমে যাচ্ছে সে দৃশ্যের কথা মনে করতে গিয়ে।

নিচে দাঁড়িয়ে যারা এফআর টাওয়ারের সেদৃশ্য দেখছিলেন তারা শুধু বলছিলেন ভবনের ছাদ থেকে যদি মোটা রশি বা এ ধরণের পরিস্থিতিতে যে জিনিসপত্র ব্যবহার করা হয় তা ফেলা হতো তাহলে এই মানুষ গুলোকে খুব সহজেই ভবনের ছাদে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।

তবে এফআর টাওয়ারের ঘটনায় একটা বিষয় স্পষ্ট। আর তা হলো এ ধরণের পরিস্থিতিতে খুব দ্রুত সঠিক পরিকল্পার অভাব! ঘটনার পর পরই যদি হেলিকপ্টারের সাহায্যে উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ একটি উদ্ধারকারী দল ভবনের ছাদে অবস্থান নিতেন তাহলে হয়তো খুব সহজেই এই মানুষ গুলোকে সরিয়ে নেয়া যেত। তাহলে হয়তো দীর্ঘসময় জীবন বাঁচাতে লড়তে হতো না অনেককেই।

তাছারা একই দলকে একাধিক দায়িত্বপালনের বিষয়টি সঠিক কাজের বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন গতকাল এফ আর টাওয়ারের উত্তর-পশ্চিম কোনে অবস্থান নেয়া দমকলের যে ক্রেনটি আগুন নেভাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল সেটাকেই আবার মানুষ উদ্ধারে গুরুত্ব পূর্ণভুমিকা রাখতে দেখা গেছে।

গতকালের ঘটনা যারা উপস্থিত থেকে দেখেছেন তাদের অনেকের মতে, ফায়ার সার্ভিসের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একাধিক দল থাকা প্রয়োজন যারা হেলিকপ্টারের সাহায্যে ভবনের ওপর থেকে উদ্ধার কাজে সমর্থ হবে। কারণ বর্তমানে রাজধানীতে ভবনের উচ্চতা এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় এটি সময়ের দাবি বলে মনে করছেন তারা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর