স্ত্রীকে ১৫ টুকরা, বিস্ফোরক তথ্য দিলো স্বামী

শ্রীপুর পৌরসভার গিলারচালা (আসপাডা মোড়) এলাকায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ১৫ টুকরা করেছে স্বামী মামুন। পরে টুকরাগুলো পলিথিন ভর্তি করে নদীতে ফেলে দেয় সে।

মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার গাজীপুরের পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার।

সুমি আক্তার (২২) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে ও গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মামুনের স্ত্রী। দেড় বছর আগে তাদের মধ্যে বিয়ে হয়। এটি উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে।

সুমি স্থানীয় গিলারচালা এলাকার সাবলাইন গ্রিনটেক গার্মেন্ট লিমিটেডের শ্রমিক ও স্বামী মামুন পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান। তারা গিলারচালা গ্রামের সফিকুল ইসলাম বিপুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া। দেড় মাস আগে তারা ওই বাড়িতে ভাড়ায় ওঠেন।

এসপি জানান, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানিয়েছে দাম্পত্য কলহের জের ধরে মূলত সুমিকে খুন করা হয়েছে। সম্প্রতি নারীঘটিত বিষয় নিয়ে স্বামী মামুনের প্রতি সুমির চরম অবিশ্বাস দেখা দেয়।

এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। পারিবারিক কলহ ও স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য স্ত্রী সুমি আক্তারকে সে হত্যা করে।

অভিযুক্ত স্বামী মামুনের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, ৮ আগস্ট স্ত্রী সুমি আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন। সে অনুযায়ী ৫ কেজি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ২৫০ গ্রাম পলিথিন ব্যাগ, একটি চাকু, তিনটি ট্রাভেল ব্যাগ ও ঘুমের ওষুধ কিনে এনে বাসায় রাখে মামুন। নির্দিষ্ট তারিখ রাত ১টার দিকে শ্বাসরোধ করে সুমিকে হত্যা করে মামুন।

পরে তার মরদেহ গোসলখানায় নিয়ে যায় এবং বাজার থেকে কিনে আনা ধারালো ছুরি দিয়ে ১৫ টুকরা করে। ৯ আগস্ট ভোর ৬টায় লাশের শরীরের অংশ ট্রাভেল ব্যাগে ভর্তি করে স্বামী মামুন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী সেতুর ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।

একইদিন রাতে লাশের অন্য ৫টি টুকরো ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে পলিথিনে পেঁচিয়ে রাখে। হাত ও পায়ের টুকরা ও মাথা আরেকটি ট্রাভেল ব্যাগে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।

এদিকে তাদের ভাড়া বাসায় এসে সুমি আক্তারের স্বজনরা কোনো খোঁজ না পেয়ে বাসার তালা ভেঙে নতুন তালা লাগিয়ে যায়। ফলে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ৫টি টুকরা নিতে না পেরে মামুন পালিয়ে যায়।

সোমবার রাত ৯টার দিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ পলিথিনে মোড়ানো লাশের টুকরা উদ্ধার করে। সুমি আক্তারের ছোট বোন বৃষ্টি আক্তার বলেন, ৮ আগস্ট কারখানা ছুটির পর ওই রাতেই নেত্রকোনা বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল সুমির। শুক্রবার রাতে মামুন তার শাশুড়িকে মোবাইলে জানান, সুমিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। সুমি বাড়িতে পৌঁছেছে কিনা শাশুড়ির কাছে জানতে চায় মামুন।

খোঁজ নিতে শুক্রবার স্বামী মামুনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে মামুন জানায়, সুমি বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ওই টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করেও না পেয়ে ছোট বোন বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা হন।

তারা বাড়ি পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন নম্বর বন্ধ পান। শনিবার বৃষ্টি ও তার স্বামী গিলারচালা (আসপাড়া মোড়) এলাকায় বোনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। বাসায় কাউকে না পেয়ে ফিরে যান তারা।

ফেরার পথে আসপাড়া মোড় এলাকায় মামুনের সন্ধান পান ও তাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেন তারা। একপর্যায়ে মামুন তাদের বাসায় যেতে বলে কৌশলে পালিয়ে যায়।

এরপর বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গিয়ে বোনকে না পেয়ে আবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু বোন-ভগ্নিপতির সন্ধান পাননি ছোট বোন বৃষ্টি। পরে সোমবার সন্ধ্যায় আবার খোঁজ নিতে এসে ঘর থেকে পচা মাংসের গন্ধ পেয়ে আশপাশের লোকদের ডেকে আনেন। এতে স্থানীয় লোকদের সন্দেহ হলে তালা ভেঙে তারা ঘরে ঢোকেন।

বৃষ্টি আক্তারের দাবি, তার বোন সুমি আক্তারকে হত্যার পর মামুন পালিয়েছে। শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব কুমার সাহা জানান, নিহত সুমি আক্তারের স্বজনদের খবরে পলিথিনে মোড়ানো লাশের টুকরা উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাবা মামুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।

বার্তাবাজার/কে.জে.পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর