কাশ্মীরিদের পক্ষে বিক্ষোভ করায় ‍শাস্তির মুখে এশিয়ান নাগরিকরা

ভারত-পাকিস্তান ছাড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাশ্মীর ইস্যু। কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসন ও সাংবিধানিক মর্যাদা তুলে নেয়ার প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন।

ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, রোববার ঈদের নামাজের পর উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনে কাশ্মীরি নাগরিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশ-পাকিস্তানসহ এশিয়ার বেশ কিছু নাগরিক বিক্ষোভ করেন। সোমবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় বলা হয়, ঈদের দিন যারা বিক্ষোভ করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে টুইট করে বাহরাইনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, স্থানীয় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনী কার্যক্রম শুরু করেছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার না করার জন্য নাগরিকদের আহ্বান জানানো হয় ওই টুইট বার্তায়।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইট বার্তায় বলা হয়, ঈদ জামাতের পর আইন ভঙ্গ করে জমায়েত হওয়ায় কিছু এশীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই মামলা পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে।নাগরিক ও বাসিন্দাদের ধর্মীয় উৎসবকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কাশ্মীরের পরিস্থিতি জানাতে গত শুক্রবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাহরাইনের বাদশাহ শেখ হামাদ বিন ইসা আল খলিফাকে টেলিফোন করার পরই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।ফোনালাপের বিষয়ে ইমরান খানের কার্যালয় বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাহরাইনের বাদশাহ বলেছেন তার দেশ কাশ্মীরের পরিস্থিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেইসঙ্গে বাহরাইন আশা করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত ইস্যু সমাধান হবে।

গত ৫ আগস্ট নরেন্দ্র মোদির সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা (ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ) বাতিল করে দিয়েছে। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি অঞ্চল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা হয়েছে। কাশ্মীরী সংগঠনগুলো বলেছে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের অর্থ হলো সেখানকার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক স্থগিত করেছে পাকিস্তান। এদিকে জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য দুটিকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করার যে সিদ্ধান্ত ভারত সরকার নিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।

গত মঙ্গলবার ভারতে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের বরাতে এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ড. আহমেদ আল বান্না বলেন, রাজ্যের পুনর্গঠন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়।

আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে উন্নতির লক্ষ্যে মূলত এটি করা হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী এটি একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-ক ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নয়- এমন ভারতীয়দের সম্পদের মালিক হওয়া এবং চাকরি পাওয়ায় বাধা ছিল।

৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের এমন এক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে যা ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশের রাজ্য পায়নি। অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান এবং একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দিয়েছে। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্য সব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দিয়েছে।

ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার কর্তৃক কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আইন পাস হওয়ায় কাশ্মীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দশা এখন ফিলিস্তিন কিংবা মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মতো হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

বার্তাবাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর