নির্মাণ শ্রমিক এসিড ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় স্ত্রী আটক

ঘুম অবস্থায় নির্মাণ শ্রমিক আল আমিনকে এসিড দিয়ে ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসিডদগ্ধের পিতা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের সাত্তার গাজী বাদি হয়ে রবিবার তালা থানায় পুত্রবধু আশা খাতুনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আশা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০০৮ সালে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কাশিমনগর গ্রামের মোমিন কারীর মেয়ে আশা খাতুন ওরফে হাফছাকে ভালবেসে বিয়ে করেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কানাইদিয়া গাজীপাড়ার সাত্তার গাজীর ছেলে নির্মাণ শ্রমিক আল আমিন। সংসার অভাবের তাড়নায় ২০১৬ সালের আগষ্ট মাসে সৌদি আরবে কাজ করতে যান আশা খাতুন।

এর সাত মাস পর ঢাকার আশুলিয়ায় কাজ করার সুবাদে আল আমিন টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুর উপজেলার গড়াকি গ্রামের এক সন্তান (নুপুর) জননী হালিমা খাতুনকে ভালবেসে বিয়ে করেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আশা খাতুন দেশে ফেরেন। তিন বছর আশা তার স্বামীকে চার লাখ ৮০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। ওই টাকায় আল আমিন বাাড়ি বানিয়েছেন মজবুত করে।

জানুয়ারি মাসে একমাত্র ছেলে আমীর হামজা ওরফে মুজাইফাকে তার বড় বোন শরিয়তপুর বসবাসরত মাইমুনার কাছে রেখে মাদ্রাসায় পড়াতেন। হালিমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রাখার জন্য স্বামীকে বারবার বলতো আশা। এ নিয়ে তাদের বিরোধ বাঁধতো। আল আমিন মাঝে মাঝে আশোক মারপিট করতো।

আশার আপত্তির মুখে গত ৬ মার্চ দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমাকে তালাক দেয় আল আমিন। ছেলে ও স্বামীর জন্য সংগৃহীত ভিসা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়ে মার্চ মাসে খুলনা নিউ মার্কেট এলাকায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যায়ে দেড় শতক জমি কেনে আশা খাতুন। তালাক দেওয়ার পরও আল আমিন দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় যাতায়াত করতো। এটা ভালভাবে মেনে নিতে পারেনি আশা।

ঢাকা থেকে ফিরে এসে খুলনার বয়রায় জানুয়ারি ও ফেব্রয়ারি মাস দেবর রহুল আমিনের পাশ ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। খুলনায় তার (স্ত্রীর) নামীয় জমি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতো আল আমিন। ঢাকায় অবস্থানকালে জুন মাসের প্রথম দিকে আশার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ভারতের মুম্বাই শহর যাওয়ার আগে তিন দিন হালিমার সঙ্গে কাটায় আল আমিন।

এ সময় হালিমা মোবাইল ফোন আশোক বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করে। যন্রণা সহ্য করতে না পেরে তালার আঠারো মাইলের বোন মমতাজ এর বাসায় এসে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আশা। ১০ দিন মুম্বাই থেকে আল আমিন আবারো দেশে ফেরে। হালিমার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখাসহ তিনটি শর্তে আশা ওই জমি স্বামীর নামে লিখে দিতে রাজী হয়।

যদিও হালিমার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার ব্যাপারে আল আমিনের আপত্তি ছিল। একপর্যায়ে স্বামী স্ত্রী মিলে সৌদিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও আল আমিন রাজী ছিলেন না। তখন আশোক মাসিক ১০ হাজার টাকা সংসার খরচ দিলে সে বিদেশ যাবে না বলে আল আমিনকে জানায়। আল আমিন তাতে রাজী হয়নি। সর্বশেষ আগামি ২৪ আগষ্ট আশা খাতুনের ও চলতি মাসের শেষে আল আমিনের পৃথকভাবে সৌদিতে যাওয়ার কথা ছিল।

সৌদিতে যাওয়ার জন্য আগে থেকে এটি বি ভাইরাস ক্যাপসুল আল আমিনকে খাওয়ানোর পর পরিবারের লোকজন আশোক ভাল চোখ দেখতো না। মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে এক মাস বাড়িতে থেকে তার আয় সংসার চালানোর কথা বলে আল আমিনকে কোথাও না যাওয়ার শর্ত দছয় আশা। আশার প্রস্তাব মানেনি আল আমিন।

বুধবার শরিতপুর যেয়ে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আল আমিন দম্পতি তালার কানাইদিয়া গ্রামে ফেরেন। বিদেশ গেলে বউরা খারাপ হয়ে যায়, এমন বউ নিয়ে ঘর না করার ব্যাপারে বিমাতা শ্বাশুড়ি মঞ্জুয়ারা, শ্বশুর সাত্তার গাজী ও এক দেবর মাঝে মাঝে আলোচনা করতো। শুক্রবার সকালে ননদ ঝুমাকে দেখতে আসে। রবিবার ছেলের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল।

স্ত্রী আশা রাজাথাকায় শনিবার সন্ধ্যায় ইফতারি আন আল আমিন। রাত নয়টার দিক না খেয়েই মেঝেতে বিছানা পেতে শুয়ে পড়ে আশা। পরে আল আমিন তাকে খাটে শুইয়ে দেয়। আশা আল আমিনের পায়ের কাছে শুয়ে থাকে। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে স্বামীর চিৎকার জেগে ওঠে আশা। এ সময় দক্ষিণ দিকের দরজা খোলা ছিল।

পরে জানতে পারে তার স্বামীর গায়ে কে বাকারা এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। প্রথম তাকে স্থানীয় চিকিৎসক আজিজুর রহমানের কাছে ও পর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রবিবার সকালে তাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একই খাটে থেকে আল আমিন এসিডদগ্ধ হলো, অথচ স্ত্রীর গায়ে কোথাও না লাগায় পরিবারের স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়।

একই পরিবারে বিয়ে হওয়া বোন তাহমনিা ও তার স্বামী রবিউল ওই বাড়িতে যাতায়াত করায় তাদেরকে সন্দেহ করতে শুরু করে আল আমিনের পরিবারের সদস্যরা। খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, প্রথমে আল আমিনর শরীরের ৩০ শতাংশ পোড়া দেখা গেলেও দিন যত পার হচ্ছে তার শরীরের ক্ষত বাড়ছে।

আল আমিনের দু’ চোখের অবস্থা খুব খারাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাকে ঢাকা এসিড সারভাইভাস ফাউন্ডেশনে ভর্তির পরামর্শ দিলেও ঈদের কারণে তারা নিয়ে যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার উপ-পরিদর্শক প্রীতিশ কুমার রায় বার্তা বাজারকে বলেন, এসিড দগ্ধের বাবা সাত্তার গাজী যেহেতু পুত্রবধুর নামে মামলা করেছেন সেকারণে তাকে রবিবার খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামীর পাশ থেকে গ্রেপ্তার করে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের কাছে আশা তার স্বামীর উপর এসিড নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে। বিষয়টি জটিল তাই বৃহত্তর না করে ঘটনার জট খোলা সম্ভব নয়। ডাক্তারের সামনে ভিকটিমের বক্তব্যে নেওয়া হয়েছে।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর