“হামার কিসের ঈদ বাহে “

রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। ঈদুল আযহা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। সকল মুসলমানদের মধ্যে ঈদের আনন্দ বিরাজ করলেও কুড়িগ্রামের ৪০৫টি চরের বন্যাদুর্গত জনপদে বানভাসিদের নেই ঈদ আনন্দ। নতুন জামা কাপড়তো দুরের কথা, এবার কোরবানির একটুকরো মাংসের জন্য চরাঞ্চলের মানুষরা করুন মিনতি করছে।

এক টুকরো কোরবানির মাংস ভাগ্যে জুটবে কি? কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪০৫টি চর ও দ্বীপচর অবস্থিত। পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে গত ৯ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত টানা বিশ দিনের বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ অঞ্চলে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ফলে ঈদে তাদের মাঝে কোনো আনন্দ নেই।সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যাত্রাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন।

২০১৩ সালের আগে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর চরে ৫২০ পরিবারের বাস ছিল। ক্রমাগত নদী ভাঙনে চরটি নদী গর্ভে বিলীনের পথে রয়েছে। যাত্রাপুর হাট থেকে নৌকা করে ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ভগবতীপুর চরে দেখা হয় মাহবুবুর রহমান (৫১) এর সাথে।তিনি জানান, বর্তমানে বন্যা ও নদী ভাঙনে ভগবতীপুর খণ্ড বিখণ্ড হয়ে নাম পরিবর্তন হয়ে উত্তর,পশ্চিম, দক্ষিণ ভগবতীপুর চরদ্বীপ হয়েছে।

পশ্চিম ভগবতীপুরে যেয়ে দেখা গেল হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। ভগবতীপুরের পূর্বে ঝুনকারচর। ঝুনকার চরে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। অন্যন্য চরের নদী ভাঙা কয়েকটা পরিবারের শতাধিক মানুষআশ্রয় নিয়েছে ঝুনকার চরে।ফেরার পথে নৌকায় দেখা হয় চর ভগবতীপুরের আদি বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের সাথে।

তিনি জানালেন, তারা তিন ভাই আব্দুর বহিম (৩৬), নজরুল (৩২) এবং তিনি নিজে সন্তানদের নিয়ে ভালই দিন চলছিল। নদী ভাঙনের কারণে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে কাটগিরির চর ও ঝুনকার চরে আশ্রয় নিয়েছে। জহিরুল থাকেন পশ্চিম ভগবতীপুরে। ঈদের কথা বলতেই বেশ জোরেশোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন জহুরুল ইসলাম, ‘প্যাট বাঁচে না ‘হামার কিসের ঈদ বাহে।’এলাও ছাওয়া পাওয়াক এখনা সুতা দিবার পাং নাই।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যে জহুরুল ইসলামের মতো ঈদের আমেজ নেই। পার্বতীপুর চরের মইজল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন বাবারে কোরবানি দেবার নিয়ত ছিলো, কিন্তু বন্যার জ্বলে সবশেষ। নাতী ও নাতনীর জন্য নুতুন কাপড় এলাও হয়নি। কোরবানির মাংস চরাঞ্চলের কেউ খেতে পারবেনা এই চরম বাস্তবতা তুলে ধরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, চরাঞ্চলের অবস্থাশালী বানভাসিরা অনেকেই এক টুকরো কোরবানির মাংস পেতে মিনতিপূর্ণ আবদার করছে।

ছোট শিশু কিশোরদের জন্য হলেও মাংস লাগবে। বিভিন্ন চরের মুরুব্বীরা আমাকে ফোন করে বলছে বাবা ঈদে কোরবানির জন্য একটি হলেও গরুর ব্যবস্থা করে দেন। অথচ জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির গরুর হাট এই যাত্রাপুরে। বানভাসিদের মিনতি রক্ষা করতে জেলার দুচার জনের সাথে কথা বলেছি, কেউ নিরাশ করেনি। আশা করছি দুএকটি চরে কোরবানি হবে।

এদিকে,কুড়িগ্রামের গরুর হাট গুলোতেও ঘুরে দেখা যায় বন্যার কারণে এবার তেমন গরুর বেচা-কেনাও জমে ওঠেনি । অধিকাংশ হাট গুলো ফাঁকায় দেখা যায় ।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর